২ অক্টোবর ২০১৪, বৃহস্পতিবার: জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে আটক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক সামিউন রহমান ইবনে হামদানের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়েছে বৃটিশ হাই কমিশন। তাকে আটকের বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে (গত ২৯শে সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘন্টার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আটক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ সংক্রান্ত (কনস্যুলার একসেস) কূটনৈতিক পত্র পাঠায় হাইকমিশন। ভিয়েনা কনভেনশন মতে ওই কনস্যুলার একসেস চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে গতকাল বলেন, অনুরোধপত্রে বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে দু’জন কর্মকর্তার নাম দেয়া হয়েছে। মনোনীত কূটনীতিকদ্বয় আটক বৃটিশ নাগরিক হামদানের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ কনসুল্যার সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। অনুরোধপত্রটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্রহণ করলেও এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফরওয়ার্ড করা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন-কানুন, বিধি-বিধান বিবেচনায় সাক্ষাতের সময়সহ অন্যান্য বিষয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই ঠিক করবে বলে জানান ওই কূটনীতিক। এদিকে বৃটিশ হাই কমিশন সূত্র জানিয়েছে, চিঠি পাঠানো ছাড়াও কয়েক দফা পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোন আপডেট পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত ‘জঙ্গি’ হামদানের সঙ্গে বৃটিশ কূটনীতিকদের সাক্ষাতের অনুরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমদ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, আন্তর্জাতিক আইন মতে যে কোন নাগরিক ভিন দেশে আটক হলে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা মনোনীত এক বা একাধিক কর্মকর্তা তাকে সঙ্গে সাক্ষাৎ চাইতে পারেন। এটি যে কেউ পেতে পারেন, তবে এ জন্য কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। আটক বৃটিশ নাগরিকের বিষয়েও তা প্রযোজ্য হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনুরোধ সংক্রান্ত কাগজপত্র এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাগজপত্র তার দপ্তরে পৌছায়নি কিংবা এখনও এ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- গত ২৮শে সেপ্টেম্বর (রোববার) রাত সোয়া ১১টায় রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে হামদানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। জঙ্গি সন্দেহে তাকে আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, সিরিয়ায় নুসরা বিগ্রেডের সদস্য হয়ে আইএস-এর কথিত জিহাদে অংশ নিয়েছিল হামদান। আইএস’র জিহাদে অংশ নিতে বৃটেন থেকে এক বন্ধুসহ তুরস্ক হয়ে সিরিয়ারও যায় সে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সিরিয়ায় অবস্থান করে কথিত জিহাদে অংশ নেয়। পরে আইএস ও নুসরা বিগ্রেডের সদস্য সংগ্রহ করতে মৌরতানিয়া ও মরক্কোতে যায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ওই ব্রিটিশ নাগরিক। তার পাসপোর্ট থেকে বিভিন্ন দেশে অবস্থানের সত্যতা পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। এদিকে সামিউন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। বলেছে, সে আইএসের সঙ্গে জড়িত না। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পাল্টা অভিযোগও করেছে সে। আটকের পর সামিউন রহমান ইবনে হামদানের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এরপরই তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সামিউল পুলিশ হেফাজতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র: মানবজমিন