১ অক্টোবর ২০১৪: ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে চলমান লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থল ও আকাশপথে হামলার ধার বর্তমান পর্যায়ে থাকলে বছর শেষে তা ৩৫০ কোটি ডলার ছাড়াবে বলে অনুমান করছে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড বাজেটারি অ্যাসেসমেন্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের আরেক লড়াই রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি। খবর রয়টার্স ও অ্যারাবিয়ান বিজনেস।
নির্দলীয় মার্কিন থিংকট্যাংকটির বিশ্লেষণে সোমবার আরো বলা হয়, বিমান হামলার মাত্রা ও স্থলসেনার সংখ্যা বাড়িয়ে লড়াই জোরদার করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে বছরে ১ হাজার ৩০০ কোটি থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে হতে পারে ইরাক ও সিরিয়ার রণাঙ্গনে।
গবেষণাকেন্দ্রটির বিশ্লেষক টড হ্যারিসন বলেন, লড়াই কত দিন চলবে, বিমান হামলার মাত্রা, আরো স্থলসেনা নামানো হবে কিনা, এমন অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের আগামী দিনের সামরিক ব্যয়।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল জানান, ১৬ জুলাই আইএসের সঙ্গে লড়তে ইরাকি সেনাবাহিনীর সহায়তায় মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের পাঠানোর পর থেকে দিনে গড়ে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি ডলার পর্যন্ত খরচ হচ্ছে পেন্টাগনের।
৮ আগস্ট ইরাকে আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে মার্কিন বাহিনী, ২২ সেপ্টেম্বর সিরিয়ায়। যৌথ বাহিনী এখন পর্যন্ত এ দুই দেশের আইএস লক্ষ্যবস্তুতে ২৯০টি বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ২৬৫টিই করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৬০০ সেনা যুদ্ধ করছে। তথ্য সংগ্রহ ও অন্যান্য কাজে তাদের বিমান দিনে গড়ে ৬০টি করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাল্লার চক্কর দিচ্ছে সেখানকার আকাশে।
এর বাইরে অন্যান্য খরচ হিসাব করে হ্যারিসনরা বলছেন, ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইরাক ও সিরিয়ায় পেন্টাগনের মোট ব্যয় হয়েছে ৭৮ থেকে ৯৩ কোটি ডলার, যা চাক হেগেলের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
বিশ্লেষণী প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, মোটামুটি বিমান হামলা এবং হাজার দুয়েক সেনা মোতায়েনের জন্যও প্রতি মাসে ২০-৩২ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে যুক্তরাষ্ট্রের। বিমান হামলার মাত্রা কিছুটা বাড়িয়ে হাজার পাঁচেক মার্কিন সেনাকে যুদ্ধক্ষেত্রে রাখতে হলে প্রতি মাসে এ ব্যয় ২৫-৫৭ কোটি ডলার পর্যন্ত থাকবে। আর ২৫ হাজার সেনাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে তীব্র বিমান হামলা চালিয়ে যেতে হলে মাসিক এ ব্যয় ১১০-১৮০ কোটি ডলার।
ইরাক, সিরিয়া ও পার্শ্ববর্তী আরব এলাকাগুলো নিয়ে একটি কট্টর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে জিহাদে নামা বর্বর আইএস জঙ্গিদের দমনে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে বড় বাজেট চায় পেন্টাগন। এখানেই মূল সমস্যা।
জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি গত সপ্তাহে জানান, পেন্টাগনের ২০১৫ বাজেটে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবে আইনসভার সম্মতি পাওয়া যাচ্ছে না। আইএস বর্তমানে যেমন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ইরাক বা সিরিয়ার জনগণের পক্ষে একা মোকাবেলা করা কঠিন বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
এদিকে রাজস্ব ঘাটতি ও সরকারি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাখার গুরুত্ব ২০১৩ সালের অক্টোবরেই টের পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকারের ঋণসীমা বাড়ানোর প্রস্তাবে বিরোধী আইনপ্রণেতাদের অসম্মতিতে ১৭ দিন বন্ধ রাখতে হয় বিভিন্ন সরকারি সেবা। পরে দুই দলের ঐকমত্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
আমেরিকা কি আর নিজের টাকায় লড়াই করবে..? যা খরছ হবে তার চেয়ে বেশি আদায় করবে। সেজন্য খরচের পরিমানটা একটু বাড়িয়ে দেখানো দরকার…