ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / জামায়াতকে টাকা দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে, অভিযোগ অস্বীকার জামায়াতের

জামায়াতকে টাকা দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে, অভিযোগ অস্বীকার জামায়াতের

saradhaরবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪: ভারতের সারদা গ্রুপের টাকা তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ঘুরে কী ভাবে জামায়াতে ইসলামির জঙ্গি আন্দোলন ও নাশকতায় যোগ হলো তা অনুসন্ধান করতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তৈরি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।

 

আনন্দবাজার তাদের কলকাতা প্রতিনিধির সূত্রে প্রকাশিত সংবাদে জানায়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের মৌলবাদীদের হাতে গিয়েছে শুক্রবার আনন্দবাজারে এই খবর প্রকাশের পরই তিনি এই কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শুক্রবার বাংলাদেশে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে তৎপর হয়েছেন সচিবরা। এক জন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর নেতৃত্বে কয়েক জন সাংসদ ও সচিবকে নিয়ে এই কমিটি গড়া হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

 

সংবাদে আরও প্রকাশ, জঙ্গি কার্যকলাপ প্রতিরোধে আওয়ামী লিগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই একটি সরকারি কমিটি গড়েছেন হাসিনা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও এই কমিটিতে রয়েছেন। তাঁদেরও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আনন্দবাজারকে বলেন, ভোটের স্বার্থে জঙ্গিদের নিয়ে রাজনীতি অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এর মাসুল দিচ্ছে। দু’দেশের রাজনীতিকদেরই এই প্রবণতা থেকে দূরে থাকা উচিত।

 

উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্টের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, সারদার বেশ কিছু অ্যাম্বুল্যান্সে কাঁচা টাকার বান্ডিল ভরে তা নিয়ে যাওয়া হতো বনগাঁ, বসিরহাট, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট ও কোচবিহারের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে। তার পরে তা বাংলাদেশি টাকা, ডলার বা ইউরোয় পরিবর্তন করে জামাতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

mamata_imran

তদন্ত চলছে ভারতেও  :

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সংসদ সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে সারদা গ্রুপের টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

দিল্লিীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আইন আইনের পথেই চলবে। এতে আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করব না।” মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, রাজ্যসভার এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এছাড়া সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকা সিবিআই।

শনিবার কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরানের ‘সন্দেহজনক’ ভূমিকা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং বাংলাদেশী গোয়েন্দা সংস্থাও সংশ্লিষ্ট মহলে নিয়মিত যেসব সতর্কবার্তা পাঠিয়ে এসেছে, সেগুলোর প্রমাণ মিলেছে। আর তারপর খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তদন্তের কথা জানিয়ে দেয়ার পর আরো অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ইমরানের ভূমিকা কখনোই সন্দেহের বাইরে ছিল না। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার (সিমি) পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে সিমিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। কিন্তু ততদিনে তলে তলে ভারত-বিরোধী কাজ সংগঠনটি ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশে এবং এখনো সক্রিয় তারা। জঙ্গি কাজকর্মের জন্য টাকাও তুলছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমান, এই ধরনের কাজে ইমরানের মতো প্রাক্তন সিমি নেতারাও জড়িত।

এই সূত্রেই এসে পড়ছে সারদা ও বাংলাদেশের ইসলামপন্থী সংগঠন জামায়াতের সঙ্গেও ইমরানের জড়িত থাকার প্রসঙ্গ।

কেন্দ্রের গুরুতর জালিয়াতি তদন্ত সংস্থা- এসএফআইও এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর টাকার একটি বড় অংশ আমেরিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় পাচার হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশেও ওই টাকার কিছু অংশ পাচার হওয়ার সম্ভাবনার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাচার হওয়া টাকার একটি অংশ তিনি দিয়েছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর তহবিলে। সেই টাকা বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার বলছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় কাদের মোল্লার ফাঁসি ঘোষণা হওয়ার পর কলকাতার ধর্মতলায় বেশ কিছু সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছিল এবং জামায়াত ও সিমি’র মদতেই সংঘটিত এসব প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ইমরানের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

এদিকে, ইমরানের হয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে তৃণমূল সরকার। পাশাপাশি মুখ খুলেছেন দলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সংখ্যালঘু মুখ ফিরহাদ (ববি) হাকিমও। ইমরানের হয়ে তার রাজনৈতিক সংগঠনটির দাবি, জামায়াত-সিমি’র সঙ্গে তৃণমূলের আর্থিক যোগাযোগের অভিযোগ এনে সংবাদমাধ্যম ‘অপ্রীতিকর ও অসত্য’ খবর প্রচার করছে। এসব অভিযোগের পক্ষে তথ্যপ্রমাণ হাজির করার জন্য সংবাদমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জও করেন তিনি, অন্যথায় আইনের আশ্রয় নেয়ারও হুমকি দেন। পুরো ঘটনার জন্য বিজেপি-কে দায়ী করেন তিনি। প্রাদেশিকতা, সাম্প্রদায়িকতা, সংঘর্ষ ও দিয়েও দাঙ্গাবাজদের রাজনীতি ছড়ানোর অভিযোগ আনেন তিনি কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। তদন্তের আগেই ইমরানকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচারের সমালোচনাও করেন তিনি।

অভিযোগ অস্বীকার জামায়াতের : 

এদিকে অর্থায়নের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম বলেন, একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল ইসলাম ধর্মভিত্তিক একটি দলকে অর্থ যোগান দেবে একথা কোন পাগলেও বিশ্বাস করবে না। এ অভিযোগ এক শ’ভাগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট পড়লে মনে হয়, আজগুবি গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা বস্তায় বস্তায় টাকা জামায়াতের নিকট এনে দিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা যদি এত কিছুই জানে, তাহলে তারা টাকার বস্তা আটক করলো না কেন? তথ্য প্রমাণ ছাড়া কেবল একটি পত্রিকার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করা বায়বীয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিজস্ব মস্তিষ্কপ্রসূত। মমতা ব্যানার্জি এবং তার সংগঠনকে কোণঠাসা করতেই এই গুজব ছাড়ানো হতে পারে বলে ধারণা করেন জামায়াতের এই নেতা। শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দলটির মূখপাত্র অধ্যাপক তাসনীম আরও বলেন, প্রকৃত পক্ষে সাম্প্রতিককালে জামায়াতের জনসমর্থন বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি বিশেষ মহল দিশেহারা হয়ে আবোল-তাবোল বকতে শুরু করেছে। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই, কোন তথ্যউপাত্ত থাকলে তা প্রকাশ করুন। অন্যথায় আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো। তাসনীম আলম বলেন, রিপোর্টটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২৪শে আগষ্ট দি নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায়। এরপর ২৫শে আগস্ট দৈনিক সমকাল এবং ২৬শে আগস্ট দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায়। তাসনীম আলম বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্ক নেই এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর টাকা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আহমেদ হাসান ইমরান এক অনলাইন পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে অর্থ দেয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা। জামায়াতের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ নেই। আমি সব অভিযোগ অস্বীকার করছি।’ তিনি বলেন, প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তৃণমূল কংগ্রেস জামায়াতে ইসলামীকে বস্তায় বস্তায় টাকা এনে দিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে বস্তা ভরে টাকা এনে জামায়াত নেতাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এত কিছু হলো অথচ কেউ টের পেল না। এতদিন পর টের পাওয়া গেল। এ এক অদ্ভুত আবিষ্কার। তিনি বলেন, একবার বলা হয় সৌদি আরব জামায়াতকে টাকা দেয়। আবার বলে পাকিস্তানের টাকায় জামায়াত চলে। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের কথাও মাঝে মধ্যে শোনা যায়। তবে এবারের প্রচারণাটা একেবারেই ব্যতিক্রম। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জামায়াতের পরামর্শে নাকি শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছেন। তিস্তা চুক্তি নাকি হতে দেননি। এ অদ্ভুত আবিষ্কার আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। তিনি বলেন, জামায়াত ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। জামায়াতের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের টাকায় জামায়াত পরিচালিত হয়। রাজনৈতিকভাবে জামায়াতকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি বিশেষ মহল অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। জামায়াতের বিরুদ্ধে তারা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এটা তারই পূর্বাভাস। কিন্তু যত চেষ্টাই করা হোক, জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। তিনি এসব অপপ্রচারের ব্যাপারে দলের নেতা-কর্মী এবং দেশপ্রেমিক জনগণকে সতর্ক থাকার আহবান জানান।