১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা নিয়ে শেষ সপ্তাহের প্রচারণা আরও তীব্র হয়েছে। সৃষ্ট বিতর্কে ক্রমেই ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যাংকগুলোর অবস্থানের ফলে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। স্কটল্যান্ডের শাসক দলের ফার্স্ট মিনিস্টার অ্যালেক্স সালমন্ড বলেছেন, স্কটিশরা তেল কোমপানি, সুপারমার্কেট কিংবা লন্ডনের গর্জনে অবদমিত হবে না। স্বাধীনতার নেতিবাচক ফল উপলব্ধি করতে রাজনীতিবিদ ও ভোটাররা ব্যর্থ হয়েছেন – ডয়চে ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড ফোল্কার্টস ল্যান্ডাউয়ের এমন মন্তব্যের পরই সালমন্ড এ কথা বললেন। ডেভিড আরও বলেছিলেন, এটা একসময় অচিন্ত্যনীয় ছিল যে, স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্য থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। এরকম ‘ভুলের’ ফলে একটি বিশাল বিষণ্নতা ডেকে আনবে স্কটল্যান্ডে। ডয়চে ব্যাংকের বৈশ্বিক কৌশলবিদ বিলাল হাফিজও এমনটিই বলেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষ বলছে, তারা স্কটল্যান্ডের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এদিকে গার্ডিয়ান ও আইসিএম-এর যৌথ জরিপে দেখা গেছে- ৫১% ভোটার স্বাধীনতার বিপক্ষে অর্থাৎ ‘নো’ ভোট, ও ৪৯% ভাগ ভোটার স্বাধীনতার পক্ষে অর্থাৎ ‘ইয়েস’ ভোট দেবেন। অপরদিকে বৃহসপতিবার সন্ধ্যায় ইয়্যুগভ-এর মতামত জরিপে দেখা গেছে, স্বাধীনতার বিপক্ষে আছে ৫২% ভোটার ও পক্ষে আছে ৪৮% ভোটার। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্তহীন ভোটাররাও এই তালিকায় আছেন। এদিকে স্বাধীনতার পক্ষের ‘দ্য ইয়েস স্কটল্যান্ড’ প্রচারণার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এ সপ্তাহের শেষে আরও ৩৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ৪৭৩টি নিবন্ধিত সড়কে গিয়ে মানুষকে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাবেন। তারা আরও বলেছেন, ‘ইয়েস’ ভোটের পক্ষে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও ২৬ লাখ লিফলেট বিলি করা হবে। এদিকে তিনটি বিখ্যাত খুচরা পণ্য বিকিকিনি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা একটি চিঠিতে দাবি করেছেন, স্কটল্যান্ড স্বাধীন হলে তাদের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে তাদের বিভিন্ন ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিতে হতে পারে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মার্ক্স অ্যান্ড সেপনসার, কিংফিশার, টিম্পসন্স। তবে আরেকটি চেইন প্রতিষ্ঠান জেডি হেদারসপুনের প্রধান টিম মার্টিন বলেছেন, স্কটল্যান্ড নিজেও অনেক ভাল করতে পারবে। এদিকে প্রচারণার শেষ সপ্তাহে সালমন্ড ট্রেজারির বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযোগ নবায়ন করেছেন। তার দাবি, স্কটল্যান্ড স্বাধীন হলে রয়্যাল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড (আরবিএস) নিজেদের সদর দপ্তর এডিনবরা থেকে সরিয়ে লন্ডনে নিয়ে যাবে- এমন পরিকল্পনা ট্রেজারি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জানিয়ে সরকারি আইন ভঙ্গ করেছে। যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা স্যার জেরেমি হেউডের কাছে লেখা চিঠিতে তিনি জানতে চেয়েছেন, কোন মন্ত্রী বা কর্মকর্তা এ ধরনের তথ্য প্রকাশের অনুমতি দিয়েছে এবং কখন এটি প্রকাশ হয়েছে। এদিকে রয়্যাল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ডের (আরবিএস) একজন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শেয়ার হোল্ডার পুলিশে অভিযোগ করেছেন যে, যুক্তরাজ্য সরকার সপর্শকাতর তথ্য প্রকাশ করেছে। কিন্তু বিবিসি প্রতিনিধিরা বলছেন, তাদেরকে বিভিন্ন সোর্স বলেছে এটি আইনের লঙ্ঘন নয়, কেননা যখন আরবিএস-এর সদর দপ্তর স্থানান্তরের সম্ভাব্যতা নিয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়, তখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র স্টক মার্কেট বন্ধ ছিল। কিন্তু সেই সমর্থক দ্য ভিঙ্ক বলছেন, যুক্তরাজ্য সরকার স্বৈরশাসকের মতো আচরণ করছে, একই সঙ্গে তাদের আচরণ গণতন্ত্রেরও বিপরীত। প্রসঙ্গত, আগামী বৃহসপতিবার স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে সেখানকার জনগণ গণভোটে অংশ নেবেন।