• রওশনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নেই বোঝাতে এই পদক্ষেপ :এরশাদ • এটা চক্রান্ত, এরশাদকে বাধ্য করা হয়েছে :হাওলাদার • কোন চাপ ছিল না, এরশাদ স্বেচ্ছায় করেছেন :বাবলু
জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব বদলের ঘটনা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে নানামুখী হিসাব-নিকাশ চলছে। কেউ কেউ এটাকে ‘হঠাত্’ বললেও বেশিরভাগই বলছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। অবশ্য দলটির অভিজ্ঞ নেতাদের মতে, এরশাদের দলে মহাসচিব বদল কোনো ঘটনাই নয়, এর আগেও এরশাদ যখন-তখন মহাসচিব পরিবর্তন করেছেন। তবে দীর্ঘদিন পর এবার মহাসচিব পরিবর্তন নিয়ে যত ধরনের সমীকরণ ও আলোচনার কথা শোনা গেছে, সেগুলো মেলালে এই সারমর্ম দাঁড়ায় যে- কার্যত তিন কারণে এই পরিবর্তন।
প্রথমত: সরকারের সঙ্গে অবনতি হওয়া সম্পর্কের উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আনুকূল্য পেতে জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ মহাসচিবের পদ থেকে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত: ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হাওলাদারের দ্বৈত ভূমিকার পরিণতি এই ঘটনা। আর তৃতীয়ত: ধাপে ধাপে জাপায় এরশাদকে আরও গুরুত্বহীন করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাওলাদারের স্থানে গেছেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
তবে এইসব সমীকরণের কথা স্বীকার করতে রাজি নন এরশাদ। বৃহস্পতিবার রাতে হাওলাদারকে সরিয়ে বাবলুকে মহাসচিব করার পর গতকাল শুক্রবার এরশাদ তার বারিধারার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেছেন, রওশনের সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই, আমরা এক, দলের নেতা-কর্মীদের এই বার্তা দিতেই মহাসচিব পদে পরিবর্তন এনেছি। তবে টানা ১৪ বছর মহাসচিব পদে থাকার পর বাদ পড়া রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত। আমার দৃঢ়বিশ্বাস এরশাদ সাহেব নিজ ইচ্ছায় এটা করেননি, চক্রান্তকারীরা চাপে ফেলে তাকে বাধ্য করেছে।’ তবে হাওলাদারের এই অভিযোগ অস্বীকার করে দলটির নবনিযুক্ত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু দাবি করেছেন, এরশাদের ওপর কোনো চাপ ছিল না। এরশাদ স্বেচ্ছায় তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন।
এরশাদ, হাওলাদার ও বাবলু নিজ নিজ অবস্থানের পক্ষে এসব কথা বললেও জাপার বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ভিন্ন তথ্য। তারা বলছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় সরকারের সঙ্গে এরশাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এরশাদ এখন মরিয়া। অন্যদিকে জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের আনুকূল্য পেতে চান তিনি। তবে এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগে হাওলাদারের তুলনায় এরশাদের কাছে বাবলুর গ্রহণযোগ্যতা বেশি। নেতা-কর্মীদের কারও কারও মতে, নির্বাচনের কিছুদিন আগে এরশাদ ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার ও দলের সত্যিকারের অবস্থান নিয়ে দলীয় প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ণ হন হাওলাদার। একদিকে, তিনি কোনো কোনো প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা বলেছেন, আবার কাউকে কাউকে প্রার্থিতা বহাল রাখার কথা বলেন। এমনকি নিজেও সস্ত্রীক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই ভূমিকায় এরশাদ ও রওশন উভয় শিবিরের কাছেই আস্থা হারান হাওলাদার।
জাপার তুলনামূলকভাবে জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতার বক্তব্য অবশ্য ভিন্ন। তাদের মতে, মহাসচিব পরিবর্তন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। অদূর ভবিষ্যতে আবারও অবস্থান পরিবর্তন করে দলীয় এমপিদের সংসদ থেকে পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করতে পারেন এরশাদ, এমন বার্তা রয়েছে রওশনপন্থীদের কাছে। এরশাদ যেন সে ধরনের প্রক্রিয়া শুরু করতে না পারেন এবং প্রয়োজনে তাকেই দলের ভেতর আরও গুরুত্বহীন করে তুলতেই মহাসচিব পদে এই পরিবর্তন।
এসব প্রশ্নের জবাবে এইচএম এরশাদ গতকাল বলেন, আমার মনে হয় এ সরকার পাঁচ বছরই থাকবে। তাই পার্টিকে সংগঠিত করা দরকার। এর জন্য নতুন মুখের প্রয়োজন। বাবলু পাশে থাকলে আমরা ভালো করব। কারও চাপে পড়ে মহাসচিব পরিবর্তন করিনি। তাছাড়া হাওলাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। সেটিও একটি বিষয় রয়েছে। তিনি মহাসচিব পদে থাকলে দুদকের কাজে প্রভাব পড়তে পারে। একথা ঠিক, দলে রুহুলের অনেক অবদান আছে।
অন্যদিকে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত ও মহাসচিব পদে পরিবর্তন-সবই চক্রান্ত। দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা একটি কুচক্রী মহল এরশাদকে চাপে ফেলে এই কাজ করেছে। তবে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, দলে কাউকে নিয়োগ দেয়া কিংবা বাদ দেয়ার ক্ষমতা দলীয় চেয়ারম্যানের। তিনি মনে করেছেন দলকে আরও সুসংগঠিত করা দরকার, তাই তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে দলকে শুধু সংগঠিতই করবো না, দলকে ক্ষমতার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য।’
যাদের নেতার কথার বেল নাই তাদের মাহাসচিব অদল বদল জাতির কছে কোন মুল্য নাই।