মহানগর নেতাদের গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দেয়ায় বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে জটিলতা বেড়েই চলেছে। কারো ওপরই ভরসা করতে পারছেন না দলের হাইকমান্ড।
দলের সিনিয়র নেতাদের কেউ জেলে আবার কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় থাকায় কমিটি গঠন নিয়ে জটিলতা আরো বেড়েছে। কমিটি গঠন নিয়ে নেতাদের সঙ্গে পরামর্শও করতে পাছেন না খালেদা জিয়া।
ফলে একমাসের মধ্যে ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের যে ঘোষণা চেয়ারপারসন দিয়েছিলেন তা হিমঘরে চলে গেছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খালেদা জিয়া। মতবিনিময়ে আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য নগর নেতাদের দায়ী করে একমাসের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের কথা ব্যক্ত করেন তিনি। এজন্য নতুন কমিটি গঠনের আগে একটি বিশেষ কমিটি করা হবে। সেই বিশেষ কমিটি একমাসের মধ্যে মহানগরের সব গ্রুপ-উপগ্রুপ ও নেতাদের নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে।
১০ ফেব্রুয়ারি মতবিনিময় শেষে মহানগরের সদস্য সচিব আব্দুস সালাম জানিয়েছিলেন, শিগগিরই মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। সেই বিশেষ কমিটি এক মাসের মধ্যে ঢাকা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন।
কিন্তু প্রায় দুই মাস হতে চললেও এখন পর্যন্ত কোনো ওয়ার্ড কমিটিও হয়নি। নেতৃত্বে আছেন আগের নেতারাই। ঘোষণার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে। বেড়েছে ক্ষোভও।
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, মনে হচ্ছে দলের প্রভাবশালী নেতাদের প্রভাবে হিমঘরে চলে গেছে হাই কমান্ডের ঘোষণা। না হলে খোদ বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘোষণার পরিনতি এমন হয় কী করে? এমন হলে নেতাকর্মীদের মনোবল অটুট থাকবে কী করে।
মহানগরের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, খালেদা জিয়ার সেই ঘোষণার পর থেকে পেরিয়ে গেছে দুই মাস। কমিটি পুনর্গঠন তো দূরের কথা বিশেষ কমিটি পর্যন্ত গঠন করা হয়নি। কবে হবে তারও কোনো ঠিক নেই। তাই বিশেষ কমিটি গঠন না হওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।
নেতারা বলেন, সম্প্রতি নগর কমিটির কর্ণধার সাদেক হোসেন খোকা কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানো ঘোষণা দিয়েছেন। তাই সংগঠনে গতি আনতে শিগগিরই যোগ্য নেতৃত্বের হাতে নগরকে তুলে দেয়া দরকার।
দলের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আ স ম হান্নান শাহ অসুস্থতার কথা বলে দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। রফিকুল ইসলাম মিয়াও অপারগতার কথা জানিয়েছেন। মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমান উল্লাহ আমানও দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। আবার যাদেরকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য প্রায় চূড়ান্ত করা হচ্ছে সেখানে সিনিয়ররা ভেটো দিচ্ছেন। ফলে কমিটি গঠন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না।
এদিকে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক খোকাকে রেখেই কমিটি পুনর্গঠিত হচ্ছে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে দলীয় পরিমণ্ডলে।
তবে দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেই কমিটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহকে প্রধান করে প্রাথমিকভাবে বিশেষ কমিটির কয়েকটি খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে কমিটির সদস্য সচিব করার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় এখনও এই বিশেষ কমিটি গঠন চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, মহানগরের বর্তমান সদস্য সচিব আব্দুস সালাম ও নগর কমিটির সম্ভাব্য সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল কারাগারে আটক থাকায় বিশেষ কমিটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে চারদিন হলো মির্জা আব্বাস ও সালাম জামিনে মুক্ত হয়েছেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাচন ও মহানগর বিএনপির বিদ্যমান গ্রুপিংও এই বিশেষ কমিটি ঘোষণা না হওয়ার কারণ বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহানগর কমিটির অপেক্ষায় হান্নান শাহ বলেন, ‘শুনছি শিগগিরই ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হবে। সেই অপেক্ষায় আছি। এবার যোগ্য নেতারাই দলের দায়িত্ব নেবেন বলে আশা করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য লে. জে. অব. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। যাচাই বাছাই চলছে। চেয়ারপারসন যে কোনো সময় কমিটি ঘোষণা করবেন। তবে উপজেলা নির্বাচনের কারণে মহানগর কমিটি গঠনে কিছুটা বিলম্ব ঘটেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দল পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতে থাকবে। চেয়ারপারসন যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৪ মে যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়ার রাতে খালেদা জিয়া ওই সময়ে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরের সব ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু গত প্রায় তিন বছরেও সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি