চারটি ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি কথা দিয়ে কথা রাখেনি বলে অভিযোগ এনেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার যে শর্ত হয়েছে সে অনুযায়ী জামায়াত তাদের প্রার্থিতা কম দিয়েছে, আবার অনেক উপজেলায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করেছে। কিন্তু জামায়াতের পদগুলোতে বিএনপি তাদের নিজস্ব কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের অনেকেই সাফল্য পাননি। এ কারণেই পঞ্চম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে কোনো মতেই ছাড় দিতে চায় না। তাই এ পর্বের নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে কোমর বেঁধে নেমেছে ১৯ দলের অন্যতম শরিক এ দলটি।
সোমবার দেশের ৭৩ উপজেলায় নির্বাচন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৬, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৩ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত। এর আগে সমাপ্ত চার দফা নির্বাচনে ৩৩টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলটির সাফল্য ছিল বেশ ঈর্ষণীয়। এই পদে জয়ী হয়েছেন ১০৯ জন।এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত জয়ী হয়েছে ৩১টি উপজেলায়।
চার দফা নির্বাচনের কৌশলসহ সার্বিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে তৎপর জামায়াত ইসলামী। এজন্য দলের প্রার্থী নেতাকর্মী-সমর্থকদের নতুন করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা মহানগর জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পঞ্চম দফা নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে দলীয় প্রার্থী কর্মী ও সমর্থকদের। কেন্দ্র দখল ভোট ডাকাতি বা ব্যালট ছিনতাইসহ যেকোনো পরিস্থিতিতে শক্ত অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৯ দলের প্রধান শরিক বিএনপি’র সঙ্গে যতটা সম্ভব ঐক্য বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে পঞ্চম দফা নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিপক্ষের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ফলাফল হাইজ্যাক করার মহড়া দেয়ার অভিযোগ করেছে জামায়াত।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান দাবি করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরিই মানুষ প্রত্যাখ্যান করত। নির্বাচনে কারচুপি, প্রভাব বিস্তার, জালভোট প্রদান ও কেন্দ্র দখল না করলে জামায়াত উপজেলা নির্বাচনে শতভাগ প্রার্থী বিজয়ী হতো।
তিনি শুক্রবার দেয়া এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলেন, পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় সন্ত্রাসীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিচ্ছে।
সব বাধা উপেক্ষা করে দলের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখাতে দৃঢ় সংকল্প জামায়াত নেতাকর্মী সমর্থকরা। তাদের দাবি যুদ্ধাপরাধসহ নানা তর্ক-বিতর্কের মধ্যেও দলটির বিরুদ্ধে কোনো ভোট ডাকাতির অভিযোগ নেই। নেই জাল ভোট কিংবা কেন্দ্র দখলের অভিযোগ। তাই বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সামাজিক প্রতিষ্ঠান দলটির সাফল্য নিয়ে উপস্থাপন করছে নানা তথ্য। সাংবাদিক থেকে বিশ্লেষক সব মহলে নানা সমালোচনা হলেও জামায়াতের জনপ্রিয়তার কথা কেউ অস্বীকার করতে পারেনি।
বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পিরোজপুরের জিয়ানগরেও। তার বিতর্কিত ভূমিকা বছরের পর বছর প্রচার করলেও মানুষ তা গ্রহণ করেনি। তার ছেলে মাসুদ সাঈদীকে মানুষ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা আ. খালেক পেয়েছেন মাত্র ছয় হাজার ভোট।
এছাড়া সাতকানিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মতো অনেক উপজেলায় জামায়াত প্রার্থীরা জেলে থেকে নির্বাচন করেছেন। তবুও তারা বিজয়ী হয়েছেন।
জামায়াত মনে করে ভোটাররা প্রার্থীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা, সততা ও সামাজিক অবস্থান দেখে তাদের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেখানে লুটপাট, জমি দখল, চাঁদাবাজি ও খুনের মামলা রয়েছে সেখানে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশের পাশাপাশি হরতাল-অবরোধে অংশ নেয়ার মতো অপরাধ ছাড়া আর কোনো মামলা নেই। রাজনৈতিক মামলা জনগণের কাছে কোনো অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য নয় বলেও মনে করেন জামায়াত নেতারা।
London Bangla A Force for the community…
