চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার। এই ধাপে ৫২ জেলার ১১৫টি উপজেলায় ভোট নেয়া হবে। সকাল আটটায় ভোট নেয়া শুরু হবে, চলবে একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত।
প্রথম ধাপের নির্বাচনে অনেক উপজেলায় বিদ্রোহী প্রাথী থাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীরা হেরেছেন বলে মনে করেন দলের নেতারা। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলটির বড় চিন্তার কারণ বিদ্রোহী প্রার্থী।
তবে প্রথম ধাপে দলের প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করতে পারলেও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে তা দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। এ পর্বের ১১৫টি উপজেলার মধ্যে ৫২টিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে তাদের। তাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনদের ‘ভয়’ সেই বিদ্রোহীদের নিয়েই।
দলীয় সূত্রমতে, দ্বিতীয় ধাপের ওই ৫২টি উপজেলার মধ্যে যেগুলোতে দল-সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেসব স্থানে এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী সক্রিয়। আবার বেশ কিছু উপজেলায় বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করার পরাও তার প্রভাব থেকে রক্ষা পাচ্ছে না দলটি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াত নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করতে পারস্পরিক সমঝোতা করছে। একটি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফার উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে ১২টির বেশি উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের তৃণমূল নেতারা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই উপজেলার বিভিন্ন পদপ্রার্থীরা দুই দলের প্রার্থীদের সমর্থনও দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের ভোটের পরপরই একাধিকবার বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। এসব বৈঠকে উপজেলায় পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা এবং জাতীয় ইস্যুগুলোর প্রচারণা।
বাকি উপজেলাগুলোতে পরাজয় ঠেকাতে বিদ্রাহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় রাখার উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। এটিও ব্যর্থ হলে শেষে বহিষ্কার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম ধাপের ভোটের আগেও বিদ্রোহী ঠেকাতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফসহ কেন্দ্রীয় নেতা ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা ‘দীর্ঘ প্রচেষ্টা’ চালিয়েছিলেন। একই সঙ্গে দলের প্রার্থীদের জয়ী করতে তৃণমূলে সমন্বয়ের উদ্যোগও নিয়েছিলেন তারা।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে চলমান উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কী কারণে উপজেলা পর্যায়ের প্রার্থীরা তা মানছেন না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। একই সঙ্গে ওই বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে।
এরপর দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগে বেশ কিছু উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে কাউকে কাউকে বহিষ্কার করেছে দলটি। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়। ফলে প্রথম ধাপের ভোটযুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই দ্বিতীয় ধাপের ১১৫টি উপজেলায় ভোটে লড়তে হচ্ছে দলটিকে। ফলে শঙ্কা কাটছে না তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন সিনিয়র নেতা জানান, তৃণমূলে দলীয় কোন্দল, এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী এবং জোটের প্রার্থীর পক্ষে সমন্বয়হীনতা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। তবে কিছু উপজেলায় ব্যাপক উদ্যোগের ফলে কিছুটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন দলের নেতারা।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে ৯৭টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপে ফল-ঘোষিত ৯৬টি উপজেলার মধ্যে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা ৪৩টিতে, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা ৩৪টিতে এবং জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত প্রার্থীরা ১২টিতে জয় লাভ করেন। আর বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন মাত্র একটি উপজেলায়। গত ৫ জানুয়ারির বিএনপি-জামায়াতহীন নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করার পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই বিপর্যয়ে একরকম অস্বস্তিতেই পড়ে আওয়ামী লীগ।