নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ের দাবিতে যত দ্রুত সম্ভব আবারো সক্রিয় আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। উপজেলা নির্বাচন শেষ হলেই অর্থাৎ মে মাস থেকেই আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি দেয়ার কথাও ভাবছে দলটি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম-কারচুপির ঘটনা ঘটলে সেদিন থেকেই আন্দোলন শুরু হবে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যর্থতা কাটিয়ে তৃণমূল
পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠছে। উপজেলা নির্বাচনের ইতিবাচক ফল মনোবলও সুদৃঢ় করেছে। বিএনপির প্রতি ব্যাপক জনসমর্থনের বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনার কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ছে না। এ অবস্থায় নতুন সংসদ নির্বাচনের আন্দোলন নিয়ে আর দেরি করা ঠিক হবে না। তাই আর সময় অপচয় না করে মে মাস থেকেই আন্দোলন শুরু হতে পারে। পঞ্চম দফায় সারাদেশে উপজেলা নির্বাচন শেষ হচ্ছে মার্চের শেষে। প্রথম দফায় ৯৭টি উপজেলার মধ্যে ৯৫টির ফলাফলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি সংখ্যক উপজেলায় জয়লাভ করেছে। দ্বিতীয় ধাপে ১১৫টি উপজেলার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আজ। পঞ্চম দফার মধ্য দিয়ে উপজেলা নির্বাচন শেষ হবে। বিএনপির এক নীতিনির্ধারক জানান, নির্বাচন প্রতিহতে চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দিয়ে কয়েক দফা সারাদেশে হরতাল-অবরোধ পালন করলেও ১৮ দল ২৯ জানুয়ারির পর থেকে আর কোনো কর্মসূচি দেয়নি। এর মধ্যে দুই দফায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংলাপ শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। সংলাপ না হলে দলকে গুছিয়ে আন্দোলনে যাওয়ারও হুমকি দেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান মানবকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চায়। আমরা চাই দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসুক। ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন দেশে-বিদেশে কেউ মেনে নেয়নি। তারপরও আমরা সরকারকে সময় দিয়েছিলাম। আশা করেছিলাম নতুন নির্বাচনের জন্য সরকার একটি সংলাপের উদ্যোগ নেবে। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াও একই আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার উল্টোপথে হাঁটছে। তাই আন্দোলন ছাড়া জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার অন্য কোনো পথ নেই। আর খুব তাড়াতাড়িই জনগণের আন্দোলন শুরু হবে।
যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে তারা তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনেও জনগণ সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। ১৯ দলীয় জোট আন্দোলন শুরুর সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যথাসময়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, যত দ্রুত সম্ভব আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। নতুন নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনকে সফল করতে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আসছে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে পুরোদমে দল গোছানোর কাজ শুরু করেছেন খালেদা জিয়া। বিগত সময়ের আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে যেখানে দুর্বলতা রয়েছে তা দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ঢাকা মহানগর বিএনপিকে গতিশীল করতে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। এক মাসের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সব কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে শক্তিশালী করতে গত সোমবার ও মঙ্গলবার খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতা ও সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন। এ সময় খালেদা জিয়া বিগত সময়ের আন্দোলনে ছাত্রদলের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ছাত্রদলকে রাজপথে সক্রিয় করতে কী করা যায় এ ব্যাপারে সাধারণ কর্মীদের মতামত নেন তিনি। এ সময় সাধারণ নেতাকর্মীরা ছাত্রদলকে অছাত্রমুক্ত করতে দলীয় প্রধানের কাছে অনুরোধ জানান। জবাবে খালেদা জিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, প্রকৃত ছাত্রদের হাতেই ছাত্রদলের দায়িত্ব দেয়া হবে। এখানে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তবে নেতৃত্বে আসলে সংগঠন, দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। কোনো পর্যায়ে পকেট কমিটি মানা হবে না। পদ নিয়ে ঘরে বসে থাকাও চলবে না। খুব শিগগিরই ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের আশ্বাস দেন তিনি।
একটি সূত্র জানায়, আপাতত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ঢাকা মহানগর কমিটির পুনর্গঠনের উদ্যোগ সাময়িক স্থবির হয়ে পড়েছে। বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব মানবকণ্ঠকে বলেন, সাদেক হোসেন খোকা গুলশান কার্যালয়ের কয়েক কর্মকর্তার মাধ্যমে কমিটি না ভাঙতে খালেদা জিয়াকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। ওইসব কর্মকর্তা বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নানা যুক্তি দেখিয়ে আপাতত বর্তমান কমিটি না ভাঙার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়াও ভবিষ্যৎ আন্দোলনের ধরন, কর্মসূচি, কৌশল নির্ধারণ ও নতুন নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে কিভাবে আরো ব্যাপকভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায় তা নিয়েও ধারাবাহিকভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গেও মতবিনিময় করছেন। জানা গেছে, নতুন উদ্যমে শুরু হওয়া আন্দোলনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত নিজেও রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি। একটি সূত্র জানায়, সক্রিয় কর্মসূচি ঘোষণার আগে আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুতে খালেদা জিয়া ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গণসংযোগ করবেন। আগামী ১ মার্চ রাজবাড়ীতে বিএনপির জনসভায় তিনি যোগ দেবেন। এছাড়াও মার্চ মাসেই আরো কয়েকটি জেলায় সফর করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এসব সফরসূচি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
গুলশান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা মানবকণ্ঠকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নেতাকর্মীদের সক্রিয়ভাবে রাজপথে নামানোর কৌশল হিসেবে দুঃসময়ে যারা ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনের মাঠে থাকছেন তাদের পুরস্কৃত করার চেষ্টা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা থাকা সত্ত্বেও সারা দেশে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন দেখভালের দায়িত্ব যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী আহমেদ, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামানকে দেয়া হয়।