বগুড়া, মানিকগঞ্জ, নাটোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, মাগুরা, জামালপুর ও রংপুর জেলায় প্রথম দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। ওইসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। বুধবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বগুড়ার ছয়টি, দিনাজপুরের দুটি, কুষ্টিয়ার দুটি, রাজশাহীর একটি, মাগুরায় দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতরা বিজয়ী হন। ব্যুরো ও সংবাদদাতাদের বিস্তারিত খবর- বগুড়া : বুধবার প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত বগুড়ার ৬টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বেসরকারি ফলের তিনটিতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অপর দুটিতে বিএনপি এবং একটিতে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা বিজয়ী হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনটি জামায়াত এবং অন্যগুলোতে বিএনপি সমর্থিতরা বিজয়ী হয়েছেন। তবে ছয় উপজেলার কোনোটিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জিততে পারেননি।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র মতে, দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ৫৫ কেন্দ্রের সবকয়টিতে জামায়াত সমর্থিত আবদুল গণি মন্ডল (আনারস) ৫৮ হাজার ৬০৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে আবার নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী কল্যাণ প্রসাদ পোদ্দার (কাপ-পিরিচ) পেয়েছেন ২৬ হাজার ৩৮৪ ভোট।
নন্দীগ্রামে ৪৮টি কেন্দ্রের সবকয়টিতে জামায়াত সমর্থিত নূরুল ইসলাম মন্ডল (আনারস) ৪৫ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত তহিদুর রহমান খান শামীম চৌধুরী (টেলিফোন) পেয়েছেন ২১ হাজার ৭১১ ভোট।
শেরপুরে জামায়াত সমর্থিত আলহাজ দবিবুর রহমান (আনারস) ৮৩ হাজার ৩৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৭৫৯ ভোট, বিএনপি সমর্থিত মাহবুবর রহমান হারেজ (টেলিফোন) ১৯ হাজার ৪৬৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেছেন।
সারিয়াকান্দিতে বিএনপি সমর্থিত মাছুদুর রহমান হিরু মন্ডল (মোটরসাইকেল) ৫৩ হাজার ৯৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আলমগীর শাহী সুমন (আনারস) পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৩৩ ভোট।
সোনাতলায় ৪৯ কেন্দ্রের মধ্যে ৪৪টিতে বিএনপি সমর্থিত একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির (মোটরসাইকেল) ৪৯ হাজার ৯১৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের জিয়াউল হক শ্যাম্পু (আনারস) পেয়েছেন ২৮ হাজার ১৮৩ ভোট। ভোট কেন্দ্র দখল ও নির্বাচনী সরঞ্জাম লুটের কারণে পাঁচটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৭৯৬ জন।
ধুনটে ৫৯ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা (জামায়াত সমর্থিত) একেএম তৌহিদুল আলম মামুন (দোয়াত-কলম)। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত শাহজাহান আলী (ঘোড়া) পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৮২৭ ভোট।
ভাইস চেয়ারম্যান : ছয় উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীরা হলেন ধুনটে জামায়াত সমর্থিত রেজাউল করিম ৫৫ হাজার ২০৮ ভোট, সারিয়াকান্দিতে জামায়াত সমর্থিত প্রভাষক নজরুল ইসলাম ৪৩ হাজার ৩৩৫ ভোট, শেরপুরে বিএনপি সমর্থিত আরিফুর রহমান মিলন ৬৬ হাজার ৮৬০ ভোট, নন্দীগ্রামে বিএনপি সমর্থিত একে আজাদ ২০ হাজার ৯৩৮ ভোট, দুপচাঁচিয়ায় বিএনপি সমর্থিত ৪৬ হাজার ২৩৬ ভোট। এছাড়া সোনাতলায় জামায়াত সমর্থিত এনামুল হক মন্ডল ২৯ হাজার ৮৯৫ ভোট পেয়ে ৪ হাজার ১৬৫ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। ৫টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত আছে। এই কেন্দ্রগুলোতে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৭৯৬।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান : ছয় উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একটিতে স্বতন্ত্র এবং চারটিতে বিএনপি সমর্থিতরা বিজয়ী হয়েছেন। একটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এগিয়ে আছেন। নির্বাচিতরা হলেন নন্দীগ্রামে স্বতন্ত্র জান্নাতুল ফেরদৌস, ধুনটে নূরজাহান আকতার, সারিয়াকান্দিতে গোলাপী বেগম, শেরপুরে বেগম সালমা ইসলাম শেফা, দুপচাঁচিয়ায় বিএনপির সখিনা বেগম (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত)। সোনাতলায় বিএনপির রঞ্জনা ২৬ হাজার ১০৬ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের লতা খাতুন পেয়েছেন ২২ হাজার ৪৯৬ ভোট। পাঁচটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত আছে। এই কেন্দ্রগুলোতে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৭৯৬।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের শোচনীয় হার : নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সবাই শোচনীয়ভাবে হেরে গেছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে তিনজন বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থীও হেরে গেছেন। এরা হলেন শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজনু, ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুন্নবী তারিক এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী।
রংপুর : মিঠাপুকুরে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আমীর সহকারী অধ্যাপক গোলাম রবক্ষানী মোটরসাইকেল প্রতীকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত জাকির হোসেন সরকার। তিনি আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৯৮ ভোট।
এদিকে, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিছুর রহমান লিটন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২৫ হাজার ৯০৬ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সামছুল গাজী সরকার পেয়েছেন ১৬ হাজার ৮৮১ ভোট। তারাগঞ্জ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আতাউর রহমান। তিনি পেয়েছেন ২৫ হাজার ৯০৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খবিরুল ইসলাম পেয়েছেন ১৭ হাজার ৬৮ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়াম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মাহামুদা বেগম। তিনি ভোট পেয়েছেন, ২৪ হাজার ৬৬৭।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে চারটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সবক’টিতেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন এবং ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপির চারজন ও আওয়ামী লীগের চারজন। এর মধ্যে দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তোজাম্মেল হক তোজা আনারস প্রতীক নিয়ে ৪৫ হাজার ১২১ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত নুরুল ইসলাম রাজা ৩১ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত হযরত আলী ও মনোয়ারা বেগম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
শিবালয় উপজেলা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আলী আকবর (কাপ-পিরিচ) নিয়ে ৪১ হাজার ৬০৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুর রহিম খান। ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের আলী আহসান মিঠু ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা আকতার লতা জয়লাভ করেন।
সিঙ্গাইর উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবিদুর রহমান রোমান (আনারস) প্রতীক নিয়ে ৬১ হাজার ৯৪৭ ভোটে জয়লাভ করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মুশফিকুর রহমান হান্নান। ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের আবুবক্কর ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারা আক্তার।
সাটুরিয়া উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বশির উদ্দিন ঠা-ু (মোটরসাইকেল) ৩৩ হাজার ৮৯৪ ভোটে জয়লাভ করেছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মজিদ ফটো (আনারস) ৩২ হাজর ১১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় এবং জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন ১৩ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন ও ঝিনুক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
নাটোর : সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত তিন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। উপজেলার ১১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে সবক’টির ফলে চেয়ারম্যান পদে থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ (আনারস) পেয়েছেন ৯০ হাজার ৫৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম শফিক (মোটরসাইকেল) ৫৭ হাজার ১৮৬ ভোট পেয়েছেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির শামিম হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আঞ্জুমানআরা হোসেন পাস করেন।
দিনাজপুর : কাহারোল ও খানসামা উপজেলার ছয়টি পদেই বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। কাহারোলে বিএনপির মামুনুর রশিদ চৌধুরী ও খানসামায় বিএনপির মোঃ সহিদুজ্জামান শাহ নির্বাচিত হয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, কাহারোল উপজেলায় ৩০ হাজার ৩৬৮ ভোটে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপির মামুনুর রশিদ চৌধুরী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোপেশ চন্দ্র রায় পেয়েছেন ২৪ হাজার ৪৭১ ভোট। অপর ২ প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সমর্থিত আবদুল মালেক সরকার ১৫ হাজার ৪১৫ ও শরিফউদ্দীন আহমেদ ৪ হাজার ১৩৪ ভোট পেয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫০১ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াতের মোঃ আবদুল গনি। তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৭৪১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হৃদয় চন্দ্র রায় পান ১৯ হাজার ২৪০ ভোট। আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী ১৬ হাজার ৫৮৬, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ওসমান গনি ৪ হাজার ৯২৮ এবং জাতীয় পার্টির জয়নাল আবেদিন সরকার পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৫৮ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭ হাজার ৩৯৯ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াতের জুলেখা বেগম। আওয়ামী লীগের চার প্রার্থী মীরা মাহবুব ১৬ হাজার ৮৬৪, বীনা রানী শীল ১৬ হাজার ৫৫৪, মৌসুমী আখতার ৮ হাজার ১৮৭ এবং সুধা রানী রায় ৪ হাজার ২৪৫ ভোট পান। কাহারোল উপজেলায় ১ লাখ ২ হাজার ১৯৩ ভোটের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭৭ হাজার ১৩০ জন।
খানসামা উপজেলায় ১৩ হাজার ৬৬৭ ভোটের ব্যবধানে আবারও নির্বাচিত হলেন বিএনপির প্রার্থী মোঃ সহিদুজ্জামান শাহ। তিনি পান ৪০ হাজার ৩৮৮ ভোট। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মাহফুজুর রহমান চৌধুরী ২৬ হাজার ৭২১, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ আবু হাতেম ১০ হাজার ৪৮৩, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মোবাশ্বের হক সরকার ৩৫৪ এবং জাসদের মোহাম্মদ আলী শাহ ৬৮৯ ভোট পান। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৫ হাজার ৫৯৮ ভোট পেয়ে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির এটিএম সুজাউদ্দীন শাহ। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ১৯ হাজার ৯৭, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন ৭ হাজার ৭২৯, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মশিউর রহমান চৌধুরী ৭ হাজার ৭৭৮ এবং জামায়াতের মোঃ আতিকুর রহমান ৬ হাজার ৭২১ ভোট পান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের মীনা বেগম ২৮ হাজার ৩২২ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। তিনি পেয়েছেন ৪৮ হাজার ২৫৪ ভোট। আওয়ামী লীগের মনোনীত নুরাইনা বেগম ১৯ হাজার ৯৩২ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহসিনা বেগম ৬ হাজার ৯০৬ ভোট পান। ১ লাখ ১১ হাজার ৩৭৭ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৮২ হাজার ২০৩ জন।
কুষ্টিয়া : সদর ও ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ের মালা পরেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রকৌশলী জাকির হোসেন (আনারস) আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ডা. আমিনুল হক রতনের (মোটরসাইকেল) চেয়ে ৪২ হাজার ৯৯৫ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। রতন পেয়েছেন ৬৩ হাজার ৩০০ ভোট। অন্যদিকে ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম আলম মালিথা (দোয়াত-কলম)। তার প্রাপ্ত ভোট ৩৮ হাজার ২৯৪। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত আবু বক্কর সিদ্দিকের (আনারস) চেয়ে ১২ হাজার ৮৬৮ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আবু বক্কর পেয়েছেন ২৫ হাজার ৪২৬ ভোট। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আরও চার প্রার্থী থাকলেও তাদের ভোটের অঙ্ক খুব একটা বড় নয়। শুধু চেয়ারম্যানই নয় ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও মহিলা দুটিতেই বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের জয়জয়কার। সদর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত কামাল উদ্দিন (তালা)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী ফরিদা হুসাইন (পদ্মফুল)। ভেড়ামারায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক নূরুল আমীন (টিয়াপাখি)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইন্দোনেশিয়া টিসু (হাঁস)।
রাজশাহী : মোহনপুর উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক আবদুস সামাদ বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪৭ হাজার ৩৪৫ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম (দোয়াত-কলম) পেয়েছেন ৪২ হাজার ৮১২ ভোট। বুধবার রাত ১০টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা বেসরকারিভাবে এ ফল ঘোষণা করেন।
এদিকে, বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলে ৫৫ হাজার ২৩১ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ। ভাইস চেয়ারম্যানে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী অপর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম (বই) পেয়েছেন ১৯ হাজার ৮০৪ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টি নেত্রী বানেছা বেগম। তিনি পেয়েছেন ৪০ হাজার ৪৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী জোসনা আরা পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৯৫১ ভোট।
মাগুরা : প্রথম দফার নির্বাচনে মাগুরার সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত প্রার্থীরা বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
সদর উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আহমেদ (আনারস) ৭২ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তানজিরা রহমান (কলস) ৭৩ হাজার ২৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক ফারুক হোসাইন (টিউবওয়েল) ৬০ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
শ্রীপুর উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বদরুল আলম হিরো (কাপ-পিরিচ) ৩৭ হাজার ৩৭৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নার্গিস সুলতানা ৪৩ হাজার ৪১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী মিজানুর রহমান (বই) ২২ হাজার ৭০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
জামালপুর : সদর উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আমজাদ হোসেন ভোলা মলি্লক, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মশিউর রহমান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শেলীনা বেগম এবং সরিষাবাড়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম, ভাইস চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ ফকির ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জহুরা লতিফ বিজয়ী হয়েছেন। জেলা রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
সদর উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আমজাদ হোসেন ভোলা মলি্লক ৮৪ হাজার ৭১৯ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বিজন কুমার চন্দ পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২০৬ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী কাজী মশিউর রহমান (বিএনপি) ভোট পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭৯। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এম খলিলুর রহমান (আওয়ামী লীগ) ৭০ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী শেলীনা বেগম (বিএনপি) ভোট পেয়েছেন ৮৫ হাজার ২৯। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফেরদৌসী বেগম বুলবুলি (আওয়ামী লীগ) ভোট পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৫৬৪।
অন্যদিকে সরিষাবাড়ী উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম ভোট পেয়েছেন ৭৪ হাজার ১৩৩। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন পাঠান ৬২ হাজার ৯৫৬ ভোট পেয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী মামুনুর রশীদ ফকির (বিএনপি) ভোট পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৫৭৬। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফতেহ লোহানী (আওয়ামী লীগ) ৫৫ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী জহুরা লতিফ (আওয়ামী লীগ) ভোট পেয়েছেন ৫৯ হাজার ৮৮৬। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হোসনে আরা (বিএনপি) ৫৮ হাজার ১৯৭ ভোট পেয়েছেন।