মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারাধীন অবস্থায় জামায়াতের নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের মৃত্যু হওয়ায় মামলাটি নিষ্পত্তি ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ময়নাতদন্তের রিপোর্টও জমা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
আদেশে আদালত বলেন, ইউসুফের মৃত্যু হওয়ায় তার বিরুদ্ধে যে সকল ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা যেমন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তেমনি তিনিও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
আজ ইউসুফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের নির্ধারিত দিন ছিল।
এর আগে সকালে ইউসুফকে দোষী সাব্যস্ত করে আদেশ দেওয়ার জন্য মৌখিক আবেদন করেন প্রসিকিউটর হায়দার আলী।
তিনি আদালতে বলেন, ইউসুফকে দোষী সাব্যস্ত করে একটা রায় অথবা কমপক্ষে একটা পর্যবেক্ষণ থাকা উচিত। কারণ এটা সাধারণ কোন দাবি নয়। এটা মানবতার ও ইতিহাসের দাবি। কোন রায় দেয়া না হলে ইতিহাস আমাদেরকে ক্ষমা করবে না।
অপরদিকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ইউসুফের পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার বলেন, আমাদের দেশের ফৌজদারি কার্যবিধিতে স্পষ্ট কোন আইন নেই যে, আসামি মারা যাওয়ার পর তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে কি না?
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে এটা মানবতার ও ইতিহাসের দাবি। এই দাবির কারণে যেন আদালত বিব্রত না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত।
ইউসুফের আইনজীবী সাইফুর রহমান বলেন, একজন আসামি মৃত্যুবরণ করার পর তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা এই সাধারণ নীতি মানা উচিত।
আদালতে প্রসিকিউটর হায়দার ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস এর কয়েকটি কেস রেফারেন্স দাখিল করে বলেন আসামী মৃত্যুবরণ করার পরও তার রায় দেয়া হয়েছে।
তখন আদালত বলেন, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস এর রেফারেন্স কি আমাদের এখানে গ্রহণযোগ্য হবে ? কারণ এ ট্রাইব্যুনালের কোন রায় তো ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস এ আপিল করা যায় না। সুতরাং আমাদের দেশে কি এমন কোন কেস রেফারেন্স আছে যেখানে এমন কোন আসামির মৃত্যুর পরও তার বিচার অব্যাহত ছিল বা রায় দেয়া হয়েছে।
এরপর হায়দার আলী বলেন, তাহলে ইউসুফকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় অথবা কোন পর্যবেক্ষণ দেওয়া হোক। কারণ এটা মানবতার দাবি। তখন আদালত বলেন, এমন নজিরও আমাদের দেশে নেই।
পরে আদালত বলেন, একেএম ইউসুফ মারা যাওয়ার ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কারাগার থেকে আমাদের কাছে পৌঁছার পর আমরা এ বিষয়ে একটি আদেশ দেব।
তবে আদালত এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই জেল কর্তৃপক্ষের ময়নাতদন্তের রির্পোট এসে পৌছেছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একেএম ইউসুফ অসুস্থজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু পরিবারের দাবি সুচিকিৎসার অভাবে তিনি মারা গেছেন।
ইউসুফের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৭জন সাক্ষী এবং তার পক্ষে তার ছেলে একেএম মাহবুবুর রহমান সাক্ষী দিয়েছেন।
গত বছরের ১ আগস্ট একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। তাকে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ৪ ধরনের ১৩টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি হত্যা, ৭টি গণহত্যা এবং অগ্নিসংযোগ ও ১টি লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।