ব্রেকিং নিউজ
Home / বিশ্ব / সংখ্যালঘু হাজারাদের ওপর ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালিয়েছে তালেবান: অ্যামনেস্টি

সংখ্যালঘু হাজারাদের ওপর ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালিয়েছে তালেবান: অ্যামনেস্টি

 

পুরো আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার এক মাস আগে দেশটির হাজারা সংখ্যালঘুদের ওপর ‘হত্যাযজ্ঞ’ ও ‘নিষ্ঠুর নির্যাতন’ চালানোর অভিযোগ উঠেছে তালেবানের বিরুদ্ধে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই অভিযোগ করেছে।

গতকাল শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসের প্রথম দিকে গজনি প্রদেশে তালেবান বাহিনী ওই হত্যাযজ্ঞ চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। গত রোববার রাজধানী কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর তালেবান নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের চেষ্টা করে আসছে। এর মধ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর খবর এল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এই ঘটনা তালেবান শাসনের একটি ‘ভয়ঙ্কর চিত্র’।

আফগানিস্তানে তৃতীয় বৃহত্তম ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হলো হাজারা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মঙ্গোলিয়ান শাসক চেঙ্গিস খানের উত্তরসূরি হলো এই হাজারা সম্প্রদায়। ১৩ শতাব্দীতে চেঙ্গিস খান ও তাঁর বাহিনী আফগানিস্তানে আক্রমণ করে। হাজারারা মূলত শিয়া মুসলিম। আফগানিস্তান ও প্রতিবেশি পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলিমদের হাতে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

তালেবানের হাতে হাজারাদের হত্যা ও নিপীড়ন নিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ গজনির মালিস্তান জেলায় ৪ ও ৬ জুলাইয়ের মধ্যে নয়জন হাজারাকে হত্যা করা হয়েছে। ওই হত্যার ঘটনা নিয়ে সংগঠনটি প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং ছবির তথ্যপ্রমাণও পর্যালোচনা করেছে।

গ্রামবাসী বলেছেন, গজনিতে আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই তীব্র আকার ধারণ করলে হাজারারা পাহাড়ে গিয়ে লুকান। খাবার সংগ্রহ করতে কিছু লোক যখন নিজ গ্রাম মুন্দারাখতে আসেন তখন দেখেন তাঁদের বাড়িতে তালেবান লুটপাট চালিয়েছে এবং বাড়ির বাসিন্দাদের জন্য সেখানে তালেবান যোদ্ধারা অপেক্ষা করছেন। এ ছাড়া কিছু লোক মুন্দারাখত গ্রামের ভেতর দিয়ে নিজ বাড়িতে যাওয়ার সময় তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। মোট ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর তিনজনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

বিবিসি খবরে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি বলেছে, একজনকে তাঁর নিজের কাপড় দিয়েই গলায় ফাঁস দেওয়া হয় এবং তাঁর হাতের মাংসপেশী কেটে ফেলা হয়। আরেকজনের মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তালেবান যোদ্ধাদের তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন নিজ নাগরিকদের ওপর এই রকম নৃশংসতা চালাচ্ছেন। তখন একজন যোদ্ধা বলেন, ‘সংঘাতের সময় প্রত্যেকেই মরতে হয়। এ সময় কার হাত অস্ত্র আছে, আর কার হাতে নেই, সেটা কোনো বিষয় না। এখন যুদ্ধের সময়।’

অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেছেন, ঠান্ডা মাথায় খুন করার অতীত ইতিহাস তালেবানের রয়েছে। এই নৃশংসতা থেকে বোঝা যায় তালেবান কী করতে যাচ্ছে। এই টার্গেট হত্যাযজ্ঞ প্রমাণ করে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনে বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা।

কাবুল দখলে নেওয়ার পর তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বিদেশি বাহিনীর হয়ে কাজ করা কোনো আফগান নাগরিকের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালাবে না তারা। শরিয়া আইনে মেনে নারীদের অধিকার সমুন্নত রাখারও কথা দিয়েছে তারা। তবে হাজারা সম্প্রদায়ের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে তাবেলানের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।