ভারতের পুরুষরা অন্য এক মহামারির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যার নাম ‘ভায়াগ্রা’। অল ইন্ডিয়া অরগ্যানাইজেশন অব কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস’ বা এআইওসিডি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশের মতো ভায়াগ্রা বিক্রি বেড়েছে। ২০১০ সালে ভারতে এই ধরনের ওষুধের বাজার ছিল প্রায় ১৮০ কোটি টাকার, অথচ ২০১৮ সালেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫৭ কোটি টাকায়।
কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য শহরের ওষুধের দোকানগুলোতে নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে যৌন বলবর্ধক ওষুধ। প্রচলিত নামে সবাই তাকে ‘ভায়াগ্রা’ বললেও এটি ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’। ভারতে উৎপাদিত ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ গোত্রের ওষুধের দাম তুলনায় অনেক কম। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আসল ‘ভায়াগ্রা’র দশ ভাগের এক ভাগও নয়। তাই এই ওষুধের কদরও বেশি। যদিও প্রকৃত ‘ভায়াগ্রা’ আমেরিকার ফাইজার কোম্পানির তৈরি একটি ওষুধ। যার দামও তুলনায় অনেক বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব ওষুদের দিকে ঝুঁকে পড়ায় গোটা প্রজন্মের পুরুষ অন্য এক মহামারির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘আইএমএ’-এর সাবেক প্রধান কেকে অগ্রবাল মুম্বইয়ের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অনেক রোগীই চান চিকিৎসকরা যেনো তাদের ‘ভায়াগ্রা’ গোত্রের ওষুধ দেয়, তবে সেটি যেনো প্রেসক্রিপশনে লেখা না হোক সেটিও তারা আশা করে। কারণ তাতে কাছের মানুষের কাছে সেই সব রোগীদের সম্মানহানীর আশঙ্কা থাকে। ভারতে বহু ক্ষেত্রেই ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ গোত্রের ওষুধ কিনতে কোনও প্রেসক্রিপশন লাগে না। চেনা দোকান গিয়ে এমনি বললেই হয়। অথবা কাচের উপর অদৃশ্য ‘ভি’ অক্ষর লেখার মতো ইশারা দিলেই বিক্রেতা বুঝে যান।
কেন এসব ওষুধ বিক্রি বাড়ছে সে বিষয়ে মনোবিজ্ঞানীরা মূলত দায়ী করছেন মানসিক চাপকে। মনোরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় গর্গ জানিয়েছিলেন, উদ্বেগ, অবসাদ এবং মানসিক চাপ বাড়লে তার প্রভাব পড়ে যৌনস্বাস্থ্যে। অনেকে সেই মানসিক চাপ কাটাতে অন্য এক ধরনের ওষুধ খান। তার প্রভাবেও যৌন অক্ষমতা বাড়তে থাকে। এর ফলে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব, সঙ্গম কালে আকর্ষণ বোধ না করা এবং যৌনাঙ্গের শিথিলতার মতো সমস্যা বাড়ে। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’। আর এই ধরনের সমস্যা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে ভায়াগ্রা আসক্তি বাড়ছে। করোনাকালে তা আরও বেড়েছে। কারণ এই সময়ে তীব্রভাবে বেড়েছে মানসিক চাপ।
সূত্র: আনন্দবাজার