ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে পৃথক দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আর ওই প্রকল্প দুটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে নেয়া হয়েছে পৃথক সাপোর্ট প্রকল্প। পৌনে তিন বছর আগে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। পরে এর পরিকল্পনায় ত্রুটি ধরা পড়ে। এজন্য বাড়াতে হচ্ছে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ। ফলে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ১০৫ শতাংশ, যার পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
‘ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প: সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ’ প্রকল্পের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকল্পটির আরডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এতে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ২৭০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। এজন্য জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৯৮৬ দশমিক ৪৮ একর। তবে বর্তমানে মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য দেখানো হয়েছে ২৬৫ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। যদিও জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৮১ দশমিক ৪৫ একর। অর্থাৎ মহাসড়কের দৈর্ঘ্য কিছুটা কমলেও জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে ৩৯৪ দশমিক ৯৮ একর।
এদিকে চার লেনের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৮৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। তবে প্রস্তাবিত আরডিপিপিতে এ ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ৯৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অর্থাৎ জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে চার হাজার ৯৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ১০৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির আরডিপিপি পর্যালোচনা বৈঠকে জানানো হয়, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে-১, এশিয়ান হাইওয়ে-২ ও সার্ক হাইওয়ে করিডোর-৫-এর অংশ। আর এ মহাসড়কটিতে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এগুলো প্রশস্তকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বাড়বে। এছাড়া সড়কের ডিজাইন পরিবর্তন, প্রশস্ততা বৃদ্ধি ও অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তনের ফলেও জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বাড়বে।
এদিকে গত বছর অক্টোবরে প্রকল্পটির অগ্রগতি পরিদর্শন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে জমা দিয়েছে আইএমইডি। এতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরে সাপোর্ট প্রকল্প একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন করা হয় ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর। আর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে গত বছর ১৭ অক্টোবর। অনুমোদনের পর প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি, যা চার লেন নির্মাণ কাজকে বিলম্বিত করতে পারে।
এদিকে প্রস্তাবিত বর্ধিত যে পরিমাণ ভূমি অধিগ্রহণ দরকার সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এমনকি সংশোধিত প্রস্তাবিত ভূমির প্রিন্ট নকশা/বিএস ম্যাপ ও খতিয়ান না থাকায় এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি বাড়তি জমি। এতে পরিষেবা সংযোগ লাইন (বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার, টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেট লাইন, পানির লাইন ও গ্যাস লাইন) স্থানান্তর সম্পন্ন হয়নি।
তথ্যমতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালে অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে করোনার জন্য পরে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক বছর বাড়ানো হয়। এরপরও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়নি। এতে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের বিধান তিনগুণ করা হয়েছে। এতে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা-সিলেট ২০৯ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটি গত ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদন করেছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ দেয়ার কথা ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৬৭৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
এদিকে সিলেট-তামাবিল ৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পটি গত বছর সেপ্টেম্বরে অনুমোদন করেছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে তিন হাজার ৫৮৬ কোটি চার লাখ টাকা। এর মধ্যে দুই হাজার ৯৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রকল্প ঋণ হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে পাওয়া যাবে। অবশিষ্ট ৬১৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।