বাবা। যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধু ঝরতেই থাকে। বাবা শাশ্বত, চির আপন। প্রতিটি সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো ছায়ার নাম ‘বাবা’। বাবার তুলনা শুধু বাবাই। চিরন্তন এক সম্পর্কের নাম। আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার নাম বাবা।
সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিজের বর্তমানকে হাসিমুখে উৎসর্গ করা এই বাবাদের আজ আলাদাভাবে স্মরণ করার দিন। যদিও বাবার জন্য আলাদা করে কোনো দিবসের প্রয়োজন নেই। তবু আনুষ্ঠানিকভাবে যদি কোনো উপায় থাকে, তাহলে মন্দ কী! প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বাবা দিবস। সে হিসেবে এ বছর আজ ২০ জুন রবিবার এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এ দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে বিশেষভাবেই। সারাজীবন বাবার সংগ্রাম ও বেদনার কথা স্মরণ করে ভালোবাসা জানাচ্ছেন সন্তানরা।
মা দিবস কয়েকশো বছর ধরে পালন করা হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় বাবা দিবসটি অনেক নতুন। দিবসটি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম চালু হয়েছিল এবং এর শুরু নিয়ে বেশ কয়েকটি গল্পও প্রচলিত আছে। ওয়াশিংটনের সোনোরা লুইস স্মার্ট নামের একজন নারী এই দিন প্রথম উদযাপন শুরু করেন। ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে তাঁর মা মারা গেলে তার বাবা পরিবারটিকে আগলে রাখেন। ১৯০৯ সালে সোনোরা গির্জার একটি বক্তব্যে মা দিবসের কথা জানতে পারেন। তখন তার মনে হলো, বাবার জন্যেও এরকম একটি দিবস থাকা উচিত। স্থানীয় কয়েকজন ধর্মযাজক তার এই আইডিয়াটি গ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, ১৯১০ সালের ১৯শে জুন প্রথমবারের মতো বাবা দিবসটি পালন করা হয়, যদিও তা আনুষ্ঠানিক ছিল না।
১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসাবে পালন করা হবে। প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। মার্কিন কংগ্রেস ১৯৭০ সালে সরকারি নির্দেশ জারি করে জানায়, প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করা হবে। ওইদিন সরকারি সব দফতরে মার্কিন পতাকা ওড়ানো হবে, নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ছয় বছর পর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এটিকে আইনে পরিণত করেন। তাঁর সময়কালে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বাবা দিবস উদযাপন শুরু হয়।
এমনটাও শোনা যায় যে, সেনোরা পালনের আগেই আমেরিকায় বাবা দিবস পালন করা হয়। সেই তারিখ ছিল ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই। সেদিন ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে সেই উদযাপনের কথা জানা ছিল না সেনোরার। বাবা দিবসকে সরকারি স্বীকৃতি এবং ছুটির দিন হিসেবে পালনের জন্য প্রচার চালিয়ে গেছেন তিনি। ১৯১৩ সালে মার্কিন সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করা সংক্রান্ত একটি বিল উত্থাপিত হয়। যদিও তখন তা আলোর মুখ দেখেনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ভারত, চিলি, পাকিস্তান, নেপাল, মেক্সিকো, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, গ্রিস, চেক প্রজাতন্ত্র, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, কিউবা. মায়ানমারেও এই দিবস পালন করা শুরু হয়। বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়ায় বাবা দিবস পালন করা হয় জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রবিবার পালন করা হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। এদিকে ৫ ডিসেম্বর বাবা দিবস পালন করা হয় থাইল্যান্ডে।
বেশিরভাগ দেশেই জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস। বাংলাদেশেও তাই। এই দিবসকে ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। বিভিন্ন বিক্রয় প্রতিষ্ঠান এই দিবস উপলক্ষে কেনাকাটায় ছাড় দিয়ে থাকে। যদিও মা কিংবা বাবার জন্য আলাদা দিবসের প্রয়োজন হয় না, তবু একটি দিন তাদের জন্য বিশেষ করে তোলার প্রচেষ্টাকেও ছোট করে দেখার উপায় নেই।
বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিমাপ করতে পারে না। বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই সন্তানদের। যাদের বাবা নেই, ছোট্টবেলায় যারা বাবাকে হারিয়েছে একমাত্র তারাই বুঝে বাবা জীবনে কতো বড় অবলম্বন, ছায়া, অনুপ্রেরণা ও আর্শীবাদ। পৃথিবীর সকল বাবাই দীর্ঘজীবী হোন। বাবাকে শর্তহীন ভালোবাসুন, শ্রদ্ধায়-যত্নে রাখুন বাবা নামের বৃক্ষকে।