শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে ‘সিলেটের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটের রাস্তায় এই শিক্ষার্থীরা প্রতীকী ক্লাস করেছেন। আজ সোমবার বেলা ১১টায় পাঠদানের ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতীকী ক্লাসে যোগ দেন তাঁরা। এ সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তার মধ্যে বসে পড়েন একদল শিক্ষার্থী। পাঠদানের জন্য আমন্ত্রিত শিক্ষক মাইক্রোফোন হাতে শুরু করেন পাঠদান।
প্রতীকী এই ক্লাস শুরুর আগে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সূচনা বক্তব্য দেন বেসরকারি লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান। মদনমোহন কলেজের সাকিব রানার সঞ্চালনায় একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজু শেখ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসীম কুমার বৈষ্ণব, মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের সুরাইয়া পারভিন ও মদনমোহন কলেজের মোহাইমেন ইসলাম। তাঁরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় এনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান। এর আগে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবিনামা পেশ, সংহতি সমাবেশ, মশাল মিছিল করেন। সর্বশেষ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ শেষে আজ হয় প্রতীকী ক্লাস।
সড়কে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতীকী পাঠদান দেন সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক রাজন দাস। সোমবার দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সড়কে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতীকী পাঠদান দেন সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক রাজন দাস। সোমবার দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সংক্রমণ কমে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। অথচ সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। অফিসার-কর্মচারী সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস করছে, তাহলে শিক্ষার্থীরা কেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করতে পারবে না? আমরা শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
করোনার কারণে গত প্রায় দেড় বছর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটানা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যায় পড়েছেন উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, লেখাপড়ার বাইরে থাকায় অন্যান্য নানা কাজে জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় উচ্চশিক্ষাও ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেশনজট তৈরি হয়েছে। ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভালো নেই। শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকায় মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ারও আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়কে বসে প্রতীকী ক্লাস করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়কে বসে প্রতীকী ক্লাস করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে
শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পরপরই শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্থপতি রাজন দাশ পাঠদানে অংশ নেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পাঠদানে ভূমিকম্প বিষয়ে কথা বলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষক রাজন দাশ বলেন, ‘পাহাড়-টিলা, হাওর-বিল আর নদনদীর জন্য সিলেট প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এক অঞ্চল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাকৃতিকভাবে সহনীয় করার সক্ষমতা ছিল। কিন্তু আমাদের সেই সক্ষমতা এখন নড়বড়ে। নির্বিচারে পাহাড়-টিলা, গাছগাছালি কেটে, নদীনালা ভরাট করে আমরা নগরবাসী বলতে গেলে প্রকৃতির এক রোষানলের মুখে আমরা। এখনো সময় আছে ঘুরে দাঁড়ানোর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সুবিশাল কোনো স্থাপনা বা স্থাপত্য নয়, আমাদের প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। তবেই ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রাকৃতিক সক্ষমতা আবার ফিরবে।’
এরপর শিক্ষার্থীরা ভূমিকম্প বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে প্রতীকী ক্লাসকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। ভূমিকম্প কেন হয়? শুধু সিলেট নগরে কেন দফায় দফায় ঝাঁকুনি? ভবিষ্যৎ করণীয় কী? শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মধ্য দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় শেষ হয় এই কর্মসূচি।