নবম জাতীয় সংসদ বহাল রেখে দশম জাতীয় সংসদের এমপিদের শপথ ও দায়িত্বগ্রহণ নিয়ে দেখা দিয়েছে সাংবিধানিক বিরোধ। একটি সংসদ বহাল রেখেই নতুন আরেকটি সংসদের যাত্রা শুরু নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞরাই কোন সমাধানে পৌঁছুতে পারছেন না। অনেকে মনে করছেন, সংবিধানে এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা নেই, শপথ নিলেই কেউ কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলা যাবে না।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৭২(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভাঙিয়া না দিয়া থাকিলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙিয়া যাইবে’। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল আছে। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতিও সংসদ ভেঙে দেননি। এরইমধ্যে দশম জাতীয় সংসদের জন্য নির্বাচিতরা শপথ গ্রহণ করেছেন। আইনজ্ঞরা তাই এ প্রশ্নের সমাধান খুঁজছেন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে।
সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে- (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে: তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’ অর্থাৎ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন যখনই হোক, আগের সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুনরা কোনোভাবেই সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করতে পারবেন না।
অপরদিকে সংবিধানের ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই সংবিধানের অধীনে যে ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের আগে শপথ গ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’ অর্থাৎ শপথের পরই একজন সংসদ সদস্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গণ্য হবেন।
এখন সংবিধানের ১২৩ (৩) এবং ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদ মিলিয়ে পড়লে দু’টি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একটি হলো নবম সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় দশমটি কার্যকর হবে না। দ্বিতীয়টি হলো- নির্বাচিতরা যেহেতু শপথ নিয়েছেন সেহেতু দশম সংসদ কার্যকর হয়ে গেছে। তাহলে দুটি সমান্তরাল সংসদ পাচ্ছে বাংলাদেশ। একদিকে সংসদ ভেঙে দেয়া হয়নি, অপরদিকে নতুন সদস্যরা শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্বভার পেয়েছেন। সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও এ বিষয়ে কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলাদেশ সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলামেইলকে বলেন, ‘নবম সংসদের এমপিরা এখনো তাদের আসনে অধিষ্ঠিত আছেন। সংবিধানের ১২৩ ধারা মোতাবেক নতুন এমপিরা আইনের আওতায় থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। তবে তারা সংসদীয় কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারবেন না।’
এদিকে দেশের দশম জাতীয় নির্বাচন অনুযায়ী নিজ আসনে পুনঃনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দ্বৈত ক্ষমতা বহালের বিষয়ে আইনজ্ঞদের যে বিতর্ক থেকে যায় তা নিয়ে কথা হয় সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হকের সঙ্গে। বাংলামেইলকে এ প্রাজ্ঞ আইনজীবী বলেন, ‘সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসরণ করে বর্তমান সরকারের পুনঃনির্বাচিত এমপিরা ক্ষমতায় আছেন। সংবিধানে এমন বিধানই রয়েছে। তাই এ নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।’
তবে বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন কথা বলেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য এ অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন। সংবিধান সম্মত কি অসম্মত সেটা তো সাধারণ জ্ঞানের (কমন সেন্স) বিষয়। একটি আসনে কখনোই দু’জন করে এমপি থাকতে পারেন না। নবম সংসদের মেয়াদ শেষে নতুনরা শপথ নিলে এ জটিলতা সৃষ্টি হতো না।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বিস্তারিত জানাবেন বলে জানিয়েছেন।