জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় দফা বিজয়ের পর সরকার, দল ও জনগণের পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভোটের পদিন সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় গণভবনের মাঠে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে বিকাল ৪টায় গণভবনের একটি সম্মেলন কক্ষে বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর গণভবনের মাঠে খোলা জায়গায় শুরু হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন।
রোববার যে ১৪৭টি আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে ১০৪টিতে জয়ের ফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জনকে নিয়ে দলটির মোট আসন দাঁড়াচ্ছে ২৩১টিতে, যা সরকার গঠনের ন্যূনতম আসনের চেয়ে ৮২টি বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ ভাষণ
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বর্জনের মধ্যে ভোটের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৮ জন। এই ভোট বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি বুধবার সকাল পর্যন্ত হরতালও দিয়েছে নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, যারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল।
নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে এই সরকার গঠনের পরও সংসদ ভেঙে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়া হবে।
সেই সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান রোববার লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই যে প্রহসনের নির্বাচন গতকাল হয়ে গেছে, প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসে, এটা নিশ্চিত যে তারা বৈধ সরকার নয়। যে বৈধ না- তার সাথে আলোচনার কি কারণ থাকতে পারে?”
‘চূড়ান্ত’ লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে জনগণ সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও নাশকতার বিরুদ্ধে শান্তি, সাংবিধানিক ধারা ও গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়েছে। বিজয় হয়েছে গণতন্ত্রের। পরাজয় হয়েছে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির।
সব অপপ্রয়াস প্রত্যাখ্যান করে জনগণ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করায় ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
যেসব দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের ও যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ভূমিকা রেখেছে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
কবে নাগাদ আলোচনা হতে পারে এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো বলেছি আগামী নির্বাচন। আগামী নির্বাচন যখন আসবে, তখন। আলোচনার আহ্বান তো আমি করে থাকি। বিষয়টা বিরোধীদলীয় নেতার ওপর নির্ভর করবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী সংসদে তো তিনি (খালেদা জিয়া) বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সংসদে থাকছে না। সেটাও দেখতে হবে।’
এ সময় বিরোধী দলের হরতাল, অবরোধ ও বোমাবাজিসহ অনাঙ্ক্ষিত বাধা উপেক্ষা করে জনগণ ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে’ ভোটে অংশগ্রহণ করায় তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
বোমবাজির মধ্যেও জনগণ ভোট দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়েছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে চেতনা বাস্তবানে এগিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে যাবে।
নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ উঠতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। আমরা তাদের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করবো।’
ভোটে কত শতাংশ ভোট পড়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবক’টি আসনের ফলাফল ঘোষণা হলে নির্বাচন কমিশনই তা জানাবে। তবে জনগণ যে ভোট দিতে পেরেছে, তাতেই আমি সন্তুষ্ট এবং যতটুকু ভোট দিয়েছে ততটুকুই যথেষ্ট।’