দেশে ফেরার সময় গুনছেন ওয়ান-ইলেভেনের অন্যতম রূপকার অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। প্রবাস জীবন আর ভালো লাগছে না তার। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৯ ডিসেম্বর। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাক না পাওয়ায় ফিরতে পারছেন না তিনি। ইতিমধ্যে হাইকমিশনার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ বছর কাটিয়েছেন চৌকস এই সেনা কর্মকর্তা। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রমতে, সরকার দেশে যে কোনো দায়িত্ব দিলে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করতে আগ্রহী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তিন বছরের মেয়াদ শেষে পর পর দুই দফায় এক বছর করে জেনারেল মাসুদের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন তিনি দেশে ফিরবেন, না কি আবার তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হবে— সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আর সরকারের এই সিদ্ধান্তহীনতায় মেয়াদ শেষ হলেও দেশে ফিরতে পারছেন না তিনি। সরকার চুক্তির মেয়াদ না বাড়ালে কিংবা নতুন কাউকে হাইকমিশনার করলে তিনি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে বিদায়ী আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দেশে ফিরবেন।
সূত্রমতে, অস্ট্রেলিয়ায় নতুন হাইকমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে সম্ভাব্য কোনো নাম নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এ সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনাও আসেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে তার দুই দফা এক বছর করে দুই বছর চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত জানানোর পর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের শেষ সময় নানা বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিমতের জের ধরে জেনারেল মঈন উ আহমেদের নির্দেশে তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। এরপর তাকে পাঠানো হয় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার হিসেবে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে তিনি হাইকমিশনের রুটিন কাজ করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নির্দেশনা না যাওয়া পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালনে আইনত কোনো বাধা নেই।
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর কাছে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার হিসেবে নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে, নাকি জেনারেল মাসুদের চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হবে— এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই বলতে পারছি না। আরও দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে সূত্র জানায়, জেনারেল মাসুদ ওয়ান-ইলেভেনের নায়কদের অন্যতম। তিনি দেশে ফিরে আসার বিষয়টি সরকারের কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। আর সেটা মনে করেই তাকে দিনের পর দিন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার হিসেবে রাখা হয়েছে। একজন হাইকমিশনারের একই স্টেশনে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করার ঘটনা কমই রয়েছে।
ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনাবাহিনীতে তিনি নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ছিলেন। এরপর তাকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে যখন তিনি দুই নেত্রীকে মাইনাস করার বিষয়ে আপত্তি করেন, নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া ও কিংস পার্টি করার বিষয়ে বিরোধিতা করেন তখনই তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। তিনি চেয়েছিলেন দুই নেত্রীর নামে মামলা দেয়া যাবে না। ওইসব মামলা টিকবে না। দুই নেত্রীকে কোনোভাবেই মাইনাস করা যাবে না, তাদের বাদ দিয়ে কিংস পার্টিও গঠন করা ঠিক হচ্ছে না। দুই নেত্রীকে বিদেশে পাঠানোর বিরোধিতাও করেন তিনি। দুই নেত্রীকে গ্রেফতারের বিরোধিতা করার কারণে গ্রেফতারের সময় তাকে কৌশল করে বিদেশে পাঠানো হয়।
তাকে ৫ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় রাখার বিষয়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে যখন দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছিল না ওই সময়ের সরকারের তরফ থেকে, তখন জেনারেল মাসুদ শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পক্ষে কঠোর অবস্থান নেন এবং সফলও হন। আর এ কারণেই ওয়ান-ইলেভেনের নায়কদের মধ্যে একমাত্র জেনারেল মাসুদই ভালো অবস্থানে রয়েছেন। অনেকে জেনারেল মাসুদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কান ভারী করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কারো কথায় গুরুত্ব দেননি। বরং ওইসব নেতাকে বলেছেন, আমাকে এসব বলতে হবে না। মাসুদের বিষয়টি আমি দেখব।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেনারেল মাসুদকে গত বছর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে দেশে ফেরানোর কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু নানা আশঙ্কার কথা বলে তাকে ফেরত আনতে দেয়া হয়নি। জেনারেল মাসুদের পারিবারিক একটি সূত্র জানায়, অনেকদিন তিনি হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার পর তিনি কিছুদিন অবসরে থাকবেন। এরপর সরকার যদি তাকে কোনো দায়িত্ব দিতে চায়, তাহলে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করতে চান। তিনি দেশের জন্য কিছু করতে চান। সরকার কোনো দায়িত্ব দিলে তিনি তার তরফ থেকে কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। বিদেশে প্রবাসী জীবন আর চাচ্ছেন না।
দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান অবসরে যাওয়ার পর সেখানে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে জেনারেল মাসুদের নামও সম্ভাব্য চেয়ারম্যানের তালিকায় আসে। এর মধ্যে ওয়ান-ইলেভেনের সময়কার তার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ও অভিজ্ঞতার গুরুত্ব বিবেচনা করে শেখ হাসিনা তাকে চেয়ারম্যান করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করেন। কিন্তু সেখানেও বাদ সাধেন কয়েকজন। তাদের একটাই কথা, জেনারেল মাসুদকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে দেয়া যাবে না। কারণ তিনি বেগম খালেদা জিয়ার বেয়াই। তাকে পদে বসালে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতি হবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জেনারেল মাসুদের সম্পর্ক ভালো নয়। তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া কেউ তাকে আগের মতো পছন্দ করেন না। এক সময় জেনারেল মাসুদকে খালেদা জিয়াও সেনাপ্রধান করতে চেয়েছেন। তিনি তালিকায়ও ছিলেন। কিন্তু বার বার সেনাপ্রধানের পদ তার কাছে ধরা দেই দেই করেও দেয়নি। বিভিন্ন সময় বিরোধিতা এসেছে। মূলত তারেক রহমানের ওপর নির্যাতন ও খালেদা জিয়ার পরিবারের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে এর সব দায়ভার তার ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে তিনি ছিলেন ঘোরতর বিরোধী। তারেক ও কোকোর নির্যাতনেরও তিনি ঘোর বিরোধিতা করেন।
ওরে এবার কমলাপুর রেইল ওয়ে স্টেশনে পোস্টিং দেয়া হোক ।