ব্রেকিং নিউজ
Home / নির্বাচিত কলাম / ফেব্রুয়ারি ২০২১ ও কিছু কথা

ফেব্রুয়ারি ২০২১ ও কিছু কথা

সাদেকুল আমিন: 

২০২১ সালের শুরু থেকেই যুক্তরাজ্যে বিশেষ করে লন্ডন শহর এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে Covid-19 আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছিল। তবে, যুক্তরাজ্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত ভ্যাকসিনেশন প্রদান কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ধীরে ধীরে সংক্রমণের এবং মৃত্যুর হার কমতে শুরু করে।

বর্তমানে, যুক্তরাজ্যে দেশব্যাপী লকডাউন থাকার কারণে আমাদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। আর এ সময়কে ব্যাবহার করে আমার এই নিবন্ধটি চারটি আন্তঃসম্পর্কিত অংশে ভাগ করে লেখা – যার প্রথম অংশে ফেব্রুয়ারি মাস সম্বন্ধে, দ্বিতীয় অংশে বাংলা ভাষা সম্পর্কে, তৃতীয় অংশটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কিত এবং চতুর্থ বা শেষ অংশটি জুমের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মিটিং এর উপর।

এক.
ফেব্রুয়ারি হচ্ছে ইংরেজি বছরের সবচেয়ে ছোট মাস এবং একমাত্র মাস যার দিনসংখ্যা ত্রিশের কম। সাধারণ বছরগুলিতে এমাসে ২৮ দিন আর অধিবর্ষে (In leap years) এ মাসে মোট ২৯ দিন থাকে।

ফেব্রুয়ারি মাস রোমান ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারিয়াস নামে ছিল। এর উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ ফেব্রুয়াম থেকে, যার অর্থ বিশুদ্ধতা। খ্রিস্টপূর্ব ৭১৩ সালে নিউমা পম্পিলিয়াস জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাস দুটি রোমান বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত করেন। সে সময় ফেব্রুয়ারি ছিল বছরের শেষ মাস এবং শেষ দিনটি ছিল বছরের শেষ দিন। তখন ফেব্রুয়ারি মাসের দিনসংখ্যা কখনো ২৩ দিন বা ২৪ দিন আবার কখনো বা ২৭ দিন ছিল। পরবর্তীতে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ সালে ডেসিমভার্সের সময়কালে এটিকে বছরের দ্বিতীয় মাস হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

খ্রিস্টপূর্ব ৮৫ সালে জুলিয়াস সিজার, জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি (Calendar) চালু করেন এবং ২৯ ফেব্রুয়ারিকে প্রথম লিপ দিবস ঘোষণার মাধ্যমে স্বীকৃতি দেন। এর পর থেকে নিয়মিতভাবে অধিবর্ষ (Leap Year) গণনা শুরু হয়। তখন থেকেই ফেব্রুয়ারি তার বর্তমান ২৮ দিনের রূপটি লাভ করে।

লক্ষ্যণীয় আজব ব্যাপার হলো, ১২৮৮ সালে, স্কটল্যান্ডের আইনসভা একটি Leap Year Act আইন পাস করে। সেই আইনে স্কটিশ মহিলারা একটি লিপ বছরে – অর্থাৎ ২৯ ফেব্রুয়ারি লিপ দিবসে পুরুষদের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দিতে পারবে এবং প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানকারী পুরুষকে জরিমানা দিতে হবে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নিয়ে জানুয়ারির শেষের দিকে লন্ডনে বাংলাদেশী কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞ আইনজীবী ও বাংলাদেশের প্রাক্তন জজ ব্যারিস্টার কুতুবউদ্দিন আহমদ সিকদার এমবিই সামাজিক মিডিয়ায় একটি message শেয়ার করেন। আমি মেসেজটি দেখে বিস্মিত হলাম। সেখানে উল্লেখ ছিল – আসছে ফেব্রুয়ারি মাস আপনার জীবনে আর কখনও না আসতে পারে! মজার ব্যাপার হলো, এ মাসে আছে – ৪ রবিবার, ৪ সোমবার, ৪ মঙ্গলবার, ৪ বুধবার, ৪ বৃহস্পতিবার, ৪ শুক্রবার এবং ৪ শনিবার। এ মাসে আরো আছে ৪ সপ্তাহ, ৪ কে ৭ বার যোগ এবং ৪ কে ৭ দ্বারা গুণ করলেও ২৮ দিন। আবার ২৮ কে ৪টি সংখ্যা যথাক্রমে ২, ৪, ৭ ও ১৪ দ্বারা ভাগ করা যায়। এ যেন এক চারের মেলা। শুধু তাই না – এ রকম নাকি প্রতি ৮২৩ বছর পর পর হয়। যারা সংখ্যাতত্ত্ব (Numerology) নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করেন তারা এর তাৎপর্য (significance) সম্বন্ধে ভালো বলতে পারবেন।

তবে, ব্যক্তি জীবনেও ফেব্রুয়ারি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ও স্বরণীয় মাস। আমার বড় ছেলের জন্ম এ মাসের শেষ দিন। এ মাস আমাদের ভাষার মাস।

দুই.
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধভাবে চলার প্রয়োজনে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশে যে মাধ্যম ব্যবহার করে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে ভাষা। বর্তমান পৃথিবীতে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশী ভাষা প্রচলিত। ভাষাভাষী জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলার স্থান সপ্তম।

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে ‘আর্য’ নামে একটি জনগোষ্ঠী প্রাচীন ভারতে আসে। তাদের কথ্যভাষাকেই প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা বলা হয়। আর এই প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। উল্লেখ্য যে, এই আর্য ভাষায় বেদ রচিত হয়েছে। এইজন্য একে বৈদিক ভাষাও বলা হয়। আর বেদকে বিকৃতি থেকে রক্ষা জন্য পন্ডিত পানিনি (খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫২০- ৪৬০) যাকে বলা হয় “the father of linguistics” কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও শৃঙ্খলা ভিত্তিক একটি সাহিত্যিক রীতি তুলে ধরেন। যার মধ্যেমে, বৈদিক ভাষারীতি আলাদা ও অবিকৃত রইল এবং এর মাধ্যমে একটি কৃত্রিম ভাষার সৃষ্টি হলো। এ ভাষার নাম সংস্কৃত। সংস্কার করে সৃষ্টি হলো বলে এর নাম সংস্কৃত।

প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদ ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে লেখ্যবৈদিক ভাষার পাশে যে সমকালীন ভাষা ছিল সেই প্রাচীন বুলি থেকে ক্রমবিবর্তনে আমাদের বংলা ভাষা গড়ে উঠেছে।

তবে, ডক্টর সুকুমার সেন বলেছেন “কথ্য সংস্কৃত হইতে বাংলা প্রাকৃত এবং তাহা হইতে বাংলার উৎপত্তি।” আর জর্জ  গ্রিয়ারসন ও ডক্টর সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায় প্রমুখ ভাষাতাত্ত্বিকগণের মতে মাগধী প্রাকৃত থেকেই বাংলা ভাষার উদ্ভব।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা ভাষা। হাজার বছরেরও বেশি সময় থেকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা ও এর আশপাশের অঞ্চলের মানুষ তাদের মনের ভাব প্রকাশ করছে এ ভাষার মাধ্যমে এবং ভবিষ্যতেও করবে।

এখানে, আমি আমার ক্ষুদ্র ধীশক্তিধারা বিক্ষিপ্তভাবে বাংলা ভাষার সংক্ষিপ্ত পটভূমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি যারা বিজ্ঞ, ভাষাবিদ ও ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন তারা অবশ্যই আরো অধিকতর মাত্রায় এ নিয়ে লিখবেন।

তিন.
জাতীয় দিবস বা বিশ্ব দিবস বা আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে প্রতি বছর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী নানা “দিবস” পালিত হয়। এই সকল দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে – কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে স্থানীয়, জাতীয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি বা ক্ষেত্র বিশেষে কোন অতীত ঘটনা স্মরণ বা উদযাপন করা।

বাংলাদেশে সরকার ঘোষিত ও অঘোষিত কিছু জাতীয় দিবস আছে। সরকার ঘোষিত জাতীয় দিবসের মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি – শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ – স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর – বিজয় দিবস উদযাপিত হয়। এছাড়া আরো অনেক সরকার অঘোষিত দিবস আছে যেমন ২৮ ফেব্রুয়ারি – ডায়াবেটিক দিবস, ১৫ মার্চ – রাষ্ট্রভাষা দিবস, ২৩ জুন – পলাশী দিবস ও ৭ নভেম্বর – জাতীয় ও সংহতি দিবস। সাধারণত সকল সরকার ঘোষিত জাতীয় দিবসগুলি সরকারি ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতি বছর পালিত হয়। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ১টি ও অঘোষিত ৩টি দিবস পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী এ মাসে বেশ কয়েকটি দিবস পালন করা হয়। কিন্তু, নিবিড় ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে বিশ্বে এ মাসের প্রায় প্রতিদিনই কোনো দিবস উদযাপন করা হয়।

সংক্ষেপে মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি: ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম নিশ্চিত হওয়ার পর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব প্রদান করেন। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ডক্টর মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ ও মুহাম্মদ এনামুল হকসহ বেশ ক’জন বুদ্ধিজীবী প্রবন্ধ লিখে প্রতিবাদ জানান৷ ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কারাচীতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দু পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার ফলে বাংলায় শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ৷ ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সমর্থনে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এতে তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করা হয়।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের দাবি জানান। তার দাবি অগ্রাহ্য হয়। ফলস্বরূপ ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ” গঠিত হয়৷ ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ পাকিস্তানের স্থপতি ও গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকায় এক ভাষণে ঘোষণা করেন “উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা”। ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রসভায় ভাষণ দেন। ঐ সভায় তার কাছে বাংলা ভাষার দাবি উত্থাপন করা হয়। এর কিছুদিন পরই, পূর্ব বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা সমস্যার ব্যাপারে মাওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠন করা হয়। এবং একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে; তবে এটি ১৯৫৮ সালের আগে প্রকাশ করা হয়নি।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পল্টন ময়দানের এক জনসভায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এর পুনরুক্তি করেন। ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। পুলিশের গুলিবর্ষণে আব্দুল জব্বার, রফিক উদ্দিন আহমেদ, আব্দুস সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে নিহত হন। ঐদিন অহিউল্লাহ নামের একজন ৮/৯ বছরেরে কিশোরও নিহত হয়। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে সারা দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস পালিত হয়। ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লিখিত হয়। ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। ১৯৫৭ সালে সরকারিভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রবর্তিত হয়। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।

বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন) শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হতো। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এর পর থেকে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।

চার.
২০২১ সালের শুরু থেকে যুক্তরাজ্যে Covid-19 মহামারীর কারনে লকডাউন চলছে। এখানে পাবলিক সভা ও সমাবেশের উপর কঠোর রেসট্রিকশন আছে। এ কারনে সরকারি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বৃহত্তর আকারে তাদের এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কার্যক্রম যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে পারেনি। তবে তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে নতুন প্লাটফর্ম Zoom এর মাধ্যমে অনেকই ভার্চুয়াল সভা, সেমিনার ও কালচারেল অনুষ্ঠান পরিচালনা করার ব্যাবস্থা করেন।

আমাদের মাতৃভাষা দিবস এখন প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতা এবং বহুভাষা প্রচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নামে পালন করা হয়। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ মাতৃভাষায় পদ্য, গদ্য, গান ও গল্প লেখালেখি করতে পারবে। পাশাপাশি তারা মাতৃভাষা নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা, আলাপ-আলোচনা, সভা ও সেমিনার, লেখালেখি চর্চা এবং কবিতা আবৃত্তি করবে। এটাইতো স্বাভাবিক এবং এগুলো সৃজনশীল কাজ।

তবে, এটা বেশ লক্ষ্যণীয় যে, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আমাদের কমিউনিটিতে কিছু কুনো ব্যাঙ আছেন। তারা তাদের নিজেদের সংকীর্ণতাকে অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। এবং তারা ভিত্তিহীন ভাবে অন্যদেরকে ধর্মান্ধ বলতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য।

কেউ কেউ আবার অন্যদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে কথাবার্তা বলছেন। যা তাদের নিজেদের মনমানসিকাতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। তারা ভাবতেই পারেননি যে কমিউনিটিতে তাদের এ সমস্ত কার্যকলাপের জন্য ঢি-ঢি পড়ে গেছে।

আর যাদের মুখে মধু অন্তরে বিষ তারা এতদিন নিজেদের মনের অবস্থাকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন। এখন নিজেরাই তা ফাঁস করে দিলেন।

পরিশেষে, হৃদয় নিয়ে একটি যথাযথ হাদিস উল্লেখ করে আজকের এ লেখাটা শেষ করছি। বেশ কিছুদিন আগে এটিএন বাংলা ইউকে টিভিতে একটি জনপ্রিয় Self Development অনুষ্ঠান প্রচারিত হত। যার নাম ছিল “Heart to Heart”। আর এই অনুষ্ঠানের আলোচক ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাধর গোলাম রহমান চৌধুরী (সরওযার)। তিনি তার আলোচনার শুরুতে একটি হাদিস বলতেন। তা হল, নবী মোহাম্মদ (স:) বলেছেন, “জেনে রেখ, মানুষের দেহের মধ্যে এক খণ্ড মাংস পিন্ড আছে, যখন তাহা সংশোধিত হয়, তখন সমগ্র দেহ সংশোধিত হয়ে যায়। আর যখন তা দুষিত হয় তখন সমস্ত দেহটাইত দুষিত হয়ে যায়। মনে রেখ ওটাই ক্বলব বা হৃদয়।” [বোখারী ও মুসলিম শরীফ]

তথ্য সুত্র:
১. সাহিত্যতত্ত্ব ও বাঙলা সাহিত্য – আহমদ শরীফ
২. ভাষা-প্রকাশ, ব্যাকরণ ও রচনা – ড: নাজমা জেসমিন চৌধুরী ও অধ্যাপক  নিরঞ্জন অধিকারী
৩. বাংলা ভাষা আন্দোলন – ইন্টারনেট
৪. ফেব্রুয়ারি মাস – ইন্টারনেট
—————————————–
২১ মার্চ ২০২১
লন্ডন