শনিবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করছে আওয়ামী লীগ। গত নবম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে ‘রুপকল্প-২০২১’ ঘোষণা করে তরুণ প্রজন্মের ব্যপক সমর্থন আদায় সক্ষম হয়েছিল দলটি। এবারের নির্বাচনে দলটির মূল শ্লোগান ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। এবারের ইশতেহারে দলটির প্রতিশ্রুতি হচ্ছে ‘রুপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা। এর পাশাপাশি নতুন কিছু প্রতিশ্রুতিও থাকছে ক্ষমতাসীন দলের ইশতেহারে।
২য় পদ্মা সেতু
দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, পণ্য পরিবহণ এবং যাত্রী পরিবহণের জন্য বিদ্যমান সড়ক ও জনপথ অপর্যাপ্ত হয়ে পড়েছে। তাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিদ্যমান সড়কের মেরামত, সংরক্ষণ, মানোন্নয়ন, সম্প্রসারণ এবং লেন সংখ্যা বাড়ানো হবে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুত পদ্মা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার ছিল অন্যতম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার বিগত পাঁচ বছরেও পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে পারেনি। পদ্মা সেতুর নকশা, জমি অধিগ্রহণ, রাস্তা পরিকল্পনাসহ সব প্রাথমিক কাজ শেষ হয়ে থাকলেও দুর্নীতির অভিযোগের কারণে প্রথম থেকেই পদ্মা সেতু নির্মাণ স্বপ্নই রয়ে যায়। তবে আওয়ামী লীগ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে ২য় পদ্মা সেতুর প্রস্তুতির কাজ শেষ করার অঙ্গীকার করেছে। সেই সাথে ২য় যমুনা সেতুরও প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করেছে।
এতে বলা হয়েছে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে (ক) ইতিমধ্যে শুরু হওয়া পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা (খ) চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ (গ) ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চার লেন নির্মাণ সমাপ্তকরণ এবং (ঘ) পটুয়াখালীতে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর; পায়রা বন্দরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হবে।
সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও প্রচার নিষিদ্ধ
কোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হবে। সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতিকে দৃঢ় করার জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনগত রক্ষাকবচের ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করার ঘোষণা থাকছে আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও প্রচার নিষিদ্ধ করা হবে এবং একটি বিজ্ঞানমনস্ক উদার মানবিক সমাজ গড়ে তোলারও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
কোরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী আইন প্রণয়ন না করা
জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকছে ইশতেহারে। কোরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না। সব ধর্মের শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণ করা হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার ও উন্নত করা হবে বলে উল্লেখ থাকছে সেখানে।
সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা
সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরো অধিকসংখ্যক কমিউনিটি রেডিও-র লাইসেন্স দেয়া হবে। ১৯.২ সাংবাদিকও সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত অষ্টম মজুরি বোর্ড বাস্তবায়িত করা হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত প্রদানের কথা থাকছে ইশতেহারে।
চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির অবশিষ্ট অঙ্গীকার ও ধারাসমূহ বাস্তবায়ন
ইশতেহারে থাকছে, চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির অবশিষ্ট অঙ্গীকার ও ধারাসমূহ বাস্তবায়িত করা হবে। পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে এবং তিন পার্বত্য জেলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখা, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করে তোলা হবে। এই তিন জেলায় পর্যটন শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পের বিকাশে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
সশস্ত্র বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা
আওয়ামী লীগ সশস্ত্র বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার যে নীতি নিয়েছিল, তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা থাকছে ইশতেহারে। এতে উল্লেখ থাকছে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং অখ-তা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরক্ষা সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলেন। তারই আলোকে আওয়ামী লীগ সরকার যে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে, তা অব্যাহত থাকবে। স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী, আধুনিক, দক্ষ অজেয় বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সাজ-সরঞ্জাম, যানবাহন সংগ্রহ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আধুনিক এবং যুগোপযোগী করা হয়েছে। এ সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং প্রথা চালু
শিল্পের ন্যূনতম মজুরি কার্যকর এবং কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। শিল্পের নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। সব শিল্প শ্রমিক, হত-দরিদ্র এবং গ্রামীণ কৃষি শ্রমিক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং প্রথা চালু করার কথাও থাকছে ইশতেহারে।
ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা
সংবিধানের ১৫, ২৮, ৩৮ ও ৪০ অনুচ্ছেদের আলোকে এবং আইএলও কনভেনশন অনুসরণে শ্রমনীতি ও শ্রমিক কল্যাণে বহুমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ উল্লেখ করে জীবনধারণের ব্যয়, মূল্যস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও পুনর্নির্ধারণ প্রক্রিয়া চলমান রাখা ও এ জন্য মজুরি কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের ভূমিকা বৃদ্ধি করাসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকছে।
এছাড়াও দেশের তরুণ, নারী. শিশুসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ও দেশবাসীর জন্যে নানা প্রতিশ্রুতি থাকছে এই ইশতেহারে।