পদ্ত্যাগ করার পর এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের উনিশ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সরকারি বাড়ি ছাড়েন নি। গত ২১ নভেম্বর সরকারের ৩০ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও তাদের ২২ জন সরকারি বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
পরবর্তীতে তাদের মধ্যে মাত্র তিন জন সরকারি বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। বাকি ১৯ জন এখনও সরকারি বাড়িতেই বহালতবিয়তে রয়েছেন।
সরকারি বাড়ি ছেড়ে দেয়া তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হলেন, মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ও মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মশিউর রহমান, মোদাচ্ছের আলী এবং আলাউদ্দিন আহমেদ এখনও সরকারি বাড়ি দখল করে আছেন।
সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এখনও সরকারি বাড়ি খালি করেননি কারণ তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়েছেন।
মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের সুবিধা ও অধিকার আইন ১৯৭৩-এ পদত্যাগের এক মাসের মধ্যে সরকারি বাড়ি ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
যারা এখনও সরকারি বাড়ি ছাড়েননি এমন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন- আফম রুহুল হক, সাহারা খাতুন, আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, রেজাউল করিম হিরা, আবুল কালাম আজাদ, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুল মান্নান খান, এবি তাজুল ইসলাম, ইয়াফেস ওসমান, মোতাহার হোসেন, শাহজাহান মিয়া, এনামুল হক, মাহবুবুর রহমান এবং আবদুল হাই রয়েছেন।
এছাড়া ওই তালিকায় রয়েছেন, সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্চিত সেন গুপ্ত, শফিক আহমেদ, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আফসারুল আমিন, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, মেহের আফরোজ চুমকি, মুজিবুর রহমান ফকির ও ওমর ফারুক চৌধুরী।
সরেজমিনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সরকারি বাড়িতে দেখা গেছে, কিছু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তাদের কিছু মালপত্র নতুন বাড়িতে সরিয়ে নিয়েছেন কিন্তু এখনও সরকারি বাড়িতে অবস্থান করছেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী নানকের সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের পুলিশ প্রহরি জানান, মন্ত্রী বাড়ি পরিবর্তনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বেইলি রোডের সাহারা খাতুনের বাড়ির পাহারাদার জানান, তিনি এখনও এ বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা আলাউদ্দিনের সরকারি বাড়ির নিরপত্তা প্রহরি জানালেন- স্যার জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই বাড়ি খালি করবেন।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক বললেন, আমি জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছি কিন্তু এখনও সরকারি বাড়ি ছাড়িনি। এক সপ্তাহের বেশি সরকারি বাড়িতে আর থাকবেন না বলে সাতক্ষীরা থেকে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলী জানান, নিরাপত্তার কারণে সরকারি বাড়ি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ছেড়ে দেব। ইতোমধ্যে ধানমন্ডিতে একটা বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী আফসারুল আমিন বললেন, তিনি বেউলি রোডে কোনো সরকারি বাড়ি পাননি। তিনি গুলশানে একটি সরকারি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন।
সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান জানান, জিনিসপত্র সরকারি বাড়ি থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে কিছু। শিগগিরই তিনি সরকারি বাড়ি ছেড়ে দেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। কারণ নির্বাচনের পর নতুন সরকারে তারা অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে আশা করছেন। তাছাড়া কিছু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকার কারেণে সরকারি বাড়ি ছাড়তে পারছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি আবাসন দপ্তরের পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, যেসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সরকারি বাড়িতে এখনও আছেন তারা সবাই বাড়ি ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন। শিগগিরই তারা সরকারি বাড়ি ছেড়ে দেবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি তারা না ছাড়েন তবে তাদের অবশ্যই ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে।