ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলার মাটিতে পা রাখলে আরেকটি শাপলা চত্বরের হুমকি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামামী বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা ঈদগাহ মাঠে আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত সংগঠনের উদ্যোগে আহমদীয়া (কাদিয়ানী) বিরোধী মহাসমাবেশে ভারতে মুসলিম নির্যাতন এবং মসজিদে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংগঠনের নেতারা এই ঘোষণা দেন।
সমাবেশে ৭ দফা দাবি সংবলিত ঘোষণাপত্রেও ভারতের মুসলমানদের উপর অত্যাচার, হত্যা বন্ধের দাবি করা হয়।
এছাড়া কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা, তাদের সকল প্রকার প্রচার-প্রকাশনা নিষিদ্ধ, তাদের নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত নিষিদ্ধ, পণ্য নিষিদ্ধ, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থাকা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর কটূক্তিকারীদের বিচার দাবি করে আইন পাস করার দাবি তুলে ধরা হয়। এটি পাঠ করেন জেলার শীর্ষস্থানীয় আলেম মাওলানা সাজিদুর রহমান। এই মহাসমাবেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাড়াও কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসে-ট্রাকে, নৌকায় করে হাজার হাজার মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ যোগ দেন।
সমাবেশকে ঘিরে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়ে ৩ শতাধিক পুলিশ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এই মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমীর শাহ আহমদ শফি। জেলার প্রবীণ আলেম ও জামেয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার সদরে মুহতামিম আশেক এলাহী ইব্রাহিমীর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুফতী মোবারক উল্লাহ, আল্লামা শামসুল হক, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মাওলানা গাজী ইয়াকুব ওসমানী প্রমুখ।
সমাবেশে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শাখাওয়াত হোসেন রাজি বলেন- ভারতের মুসলমানদের অবস্থা এখন খুবই নাজুক। মুসলমানদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতন চলছে। ভারতের বিভিন্ন এলাকার মসজিদের মিনারে উঠে মাইক ভেঙে ফেলা হচ্ছে, হনুমানের ছবি বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। চোখে এসিড দিয়ে মুসলমানদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জঙ্গি সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন- নরেন্দ্র মদি বাংলার মাটিতে পা রাখলে আবার একটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটবে। নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে দেয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজি আরো বলেন- তিনি ইসলাম ও মানবতার দুশমন, বাংলাদেশের দুশমন।
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিশের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক বলেন- কাদিয়ানিরা কাফের। এ নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। কোরআন-হাদিস দ্বারা তা প্রমাণিত। পরিতাপ নিয়ে বলছি, ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখতে প্রধানমন্ত্রীকে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া দরকার। অমুসলিম মারা গেলে তার জানাজা পড়া হারাম। এটা ইসলাম স্বীকৃত। তেমনিভাবে কাদিয়ানিরা যে কাফের তা-ও প্রমাণিত সত্য। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আন্দোলন করছি। আন্দোলন নিয়ে আমরা আর ইঁদুর বিড়াল খেলতে চাই না। আমাদের আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে সচিবালয়, গণভবন বন্ধ করে দেয়া হবে। গোটা দেশ অচল করে দেওয়া হবে। এজন্য সকলকে প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান তিনি।
মহাসমাবেশের প্রধান অতিথি হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী বলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেই কাদিয়ান বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। কাদিয়ানিদের আহমদিয়া মুসলিম জামাত বলা হয়। তারা হলো শয়তানিয়া কাফের জামাত। কোরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে শেষ নবী না মানলে তারা কাফের। সরকারের কাছে দাবি করছি ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কাদিয়ানিদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। কে কাফের? কে মুসলমান? তা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। নির্বাচনে কে জিতবে, কে হারবে তা নিয়ে যেমন বসে থাকা যায় না। জেতার জন্য চেষ্টা করতে হয়। তেমনিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার জন্য সকলকে সম্মিলিত ভাবে চেষ্টা করতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে, আমাদের দেশেও করতে হবে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইজ্জত-সম্মান রক্ষায় আমাদেরকে জীবন দিতে হবে। মহাসমাবেশে ১৭ জন কাদিয়ানি তওবা করে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে।