প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে দিল্লি। মৌজপুর, ব্রহ্মপুরী, ভজনপুরা চক, গোকুলপুরীসহ বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষে রক্তাক্ত পুরো রাজধানী। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন-সিএএ’র পক্ষ-বিপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ত্রিমুখী সংঘের্ষ নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে অন্তত ১১ জন। নিহতের মধ্যে পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিনভরই গুলি, কাঁদানে গ্যাস, ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে শুরু করে একাধিক জায়গায় অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ছিল রাজধানীর উত্তর-পূর্ব অঞ্চল।
১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। রাস্তার দখল নিয়েছে পুলিশ-আধাসেনা। এ দিন হাসপাতালে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এক পুলিশ কর্মী-সহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০। আহত দেড় শতাধিক। সন্ধ্যার দিকে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে জারি হয়েছে কারফিউ।
রাজধানীর দিল্লির পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। ফলে সংঘর্ষের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মঙ্গলবার বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুপুরে ওই বৈঠকে ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালসহ পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। বৈঠকে সেনা নামানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এখনও সেনাবাহিনীর নামানোর পক্ষে না দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণারয়। তবে প্রয়োজনে সেনা নামানোর রাস্তাও খোলা রাখা হয়েছে।
তবে পুলিশ দাবি করলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সিপি প্রবীর রঞ্জন বলেন, ‘মৌজপুর, জাফরাবাদ, চাঁদ বাগ ও করাবল নগরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।’
সংঘর্ষের জেরে মঙ্গলবার উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল। সরকারি অফিসেও হাজিরা ছিল খুব কম। জাফরাবাদ মৌজপুর, বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশন বন্ধ।
দেশটির রাজধানীতে এমন ঘটনা ঘটলো, যখন দেশটিতে সফরে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুইদিনের সফরে গুজরাটের প্রধান শহর আহমেদাবাদে সপরিবারে অবস্থান করছেন ট্রাম্প। সোমবার সন্ধ্যার দিকে আহমেদাবাদ থেকে রাজধানী দিল্লিতে ফেরার কথা রয়েছে ট্রাম্পের; তার আগে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এর আগে রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকেই নয়াদিল্লির জাফরাবাদে কয়েক হাজার নারী নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন বেশ কয়েক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সিএএ-বিরোধীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। ওইদিন যানবাহন ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় দিল্লির একাংশ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দিল্লির মোজপুরে পুলিশের একজন হেড কনস্টেবলসহ অন্তত ৭ জন নিহত হোন।
আজ মঙ্গলবার সকাল হতেই ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায়। লাঠি, রড, ইট-পাটকেল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে দেখা গিয়েছে অনেককে। বেলা বাড়তেই উত্তেজনা আরও বাড়ে। একাধিক দোকানপাট, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ভজনপুরা, চাঁদ বাগ, করাবল নগরের মতো এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ দিনও একাধিক জায়গায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।