ওমানের নতুন সুলতান হাইথাম বিন তারেক ক্ষমতা গ্রহণের পর নতুন বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। যা ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা এই নিষেধাজ্ঞায় পড়েন।
সম্প্রতি দেশটির জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওমান প্রবাসীদের জন্য ৩৭টি বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। দেশটির নাগরিকদের আরও বেশি চাকরির সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যেই মূলত এসব পেশায় প্রবাসীকর্মী নিয়োগে বিধিনিষেধ জারি করা হয়।
এর ফলে ওমানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপাকে পড়েছেন। হারাতে হচ্ছে তাদের দীর্ঘদিনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আবার অনেকেই সব ফেলে স্বদেশে ফিরে আসছেন।
অনুবাদ/টাইপ স্টোর, ফটোকপি পরিষেবা, সেলাই, লন্ড্রি, যানবাহন, মোটরগাড়ি মেরামত, নৌপরিবহন, বিক্রয়, জনশক্তি এবং নিয়োগ পরিষেবাদি, হেয়ারড্রেসিং/সেলুন, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী এবং এতিমদের জন্য ট্যাক্সি অপারেশন, মাছধরা এবং পুনর্বাসন ঘরসহ আরও বেশকিছু ব্যবসা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের ওমানি পার্টনার/স্পন্সর ছাড়াই শতভাগ নিজস্ব মালিকানায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। যা এর আগে পারতো না।
দেশটির পূর্বের আইন অনুযায়ী, কেউ ওমানে বিনিয়োগ করতে চাইলে তাকে কমপক্ষে ১ লাখ ৫০ হাজার ওমানি রিয়াল বিনিয়োগ করতে হত। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার সমমান। কিন্তু নতুন আইনে মাত্র ৩০০০ ওমানি রিয়াল যা বাংলাদেশি টাকায় ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার সমপরিমাণ বিনিয়োগ করেই একজন প্রবাসী শতভাগ মালিকানায় ওমানে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে।
ওমানের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ড. আলী বিন মাসউদ আল সুনাইদী বলেন, নতুন আইন ওমানের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনবে। আইনের মূল অংশগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো সুলতানাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগকারীদের তার কোম্পানির অ্যাকাউন্টে প্রয়োজনীয় ১ লাখ ৫০ হাজার ওমানি রিয়াল থাকা বাধ্যতামূলক করবে না।
তিনি বলেন, বিদেশিদের ওমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শতভাগ মালিকানা পেতে সহায়তা করবে। আইন অনুযায়ী, কোনো বিনিয়োগকারী স্থানীয় স্পন্সরের প্রয়োজন ছাড়াই ওমানে তার ব্যবসা করতে পারবে।
দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের (এমওসিআই) বিনিয়োগ বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম আল মামারির মতে, এমন আইনের ফলে দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে দক্ষতার স্তর বাড়িয়ে তুলবে।
তিনি বলেন, এটি অপারেটিং সংস্থাগুলির দক্ষতার স্তর বৃদ্ধি করবে এবং অর্থনৈতিক দক্ষতা এবং আধুনিক বিনিয়োগ প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে সহায়তা করে। এটি অর্থনৈতিক ভিত্তির বৈচিত্র্য সাধনের দিকে নিয়ে যাবে এবং ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে নতুন এফসিআইএল সালতানাতের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় উদারীকরণের চিহ্নিত করে। এটি ব্যবসা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি শক্তিশালী এবং আকর্ষণীয় বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয়।
তিনি বলেন, নতুন এফসিআইএল বাণিজ্যিক সংস্থা আইন, বেসরকারিকরণ আইন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ আইন এবং দেউলিয়া আইনের সাথে একত্রে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওমান সরকারের ভীষণ-২০৪০ পূরণের লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটির সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথম ধাপে বিদেশিদের জন্য উন্মোচন করে দেয়া হয়েছে ওমানের দুয়ার।
বালুশি বলেন, ওমানে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, এই সম্পদ কাজে লাগাতে হবে, নবজাগরণের শুরু থেকে এখন অবধি উন্নয়নের প্রয়োজন এবং অগ্রাধিকারগুলি আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ওমান স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত। এটিতে টেকসই পর্যায়ে পরিবর্তনের এবং স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য সমস্ত উপাদান, সংস্থান এবং প্রস্তুতি রয়েছে, যার মধ্যে সবাই কাজ করবে, উৎপাদন করবে এবং সমস্ত প্রকারের সুবিধা পাবে।
দেশটির বিনিয়োগ পরামর্শদাতারা এবং আর্থিক পরামর্শদাতারা বলেন, ওমান সঠিক সময়ে নতুন আইনটি কার্যকর করেছে, কারণ ওমান বিভিন্ন খাতে নতুন বিনিয়োগ পরিচালনা করতে প্রস্তুত।