মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি মারা গেছেন। সোমবার (১৭ জুন) দেশটির একটি আদালতে বক্তব্য রাখার সময় অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি।
মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, আদালতে শুনানির সময় মুরসি দীর্ঘ সময় বক্তব্য রাখছিলেন। প্রায় ২০ মিনিট বক্তব্য রাখার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এসময় মুরসিকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে।
মুহাম্মদ মুরসি মিশরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ২০১২ সালে অনুষ্টিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে প্রেসিডেন্টের আসনে বসেন তিনি।
২০১৩ সালে এক বিক্ষোভের জের ধরে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেন দেশটির সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। সিসি দেশের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেন।
মুরসির পুরো নাম মুহাম্মাদ মুরসি ইসা আল-আইয়াত। ১৯৫১ সালের ২০ অগাস্ট মিশরের শারক্বিয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রপতি হওয়া ছাড়াও মুরসি ২০০০ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০০৫ সাল পর্যন্ত মিশরের সংসদে বহাল ছিলেন। এ সময় তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
২০১১ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলে মুরসি তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
এরপর তিনি মিশরের দুই পর্বের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যেটি ২০১২ সালের মে ও জুনে অনুষ্ঠিত হয়, সে নির্বাচনে মুরসি এফজেপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন এবং উভয় পর্বেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
২০১২ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড ও এফজেপি আনুষ্ঠানিকভাবে মুহাম্মাদ মুরসিকে তাদের সব সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেয় এবং তাকে ‘মিশরের সর্বস্তরের মানুষের রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
মুরসি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ও ১৯৭৮ সালে একই বিষয়ে সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান।
১৯৮২ সালে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যালিফোর্নিয়াতে মুহাম্মাদ মুরসির প্রকৌশল বিষয়ে গবেষণা শেষ হয় এবং তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই তিনি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, নর্থরিজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৮৫ সালে মুরসি শারকিয়া প্রদেশের জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার উদ্দেশে ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে মিশরে চলে আসেন।
মুহাম্মাদ মুরসির পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুই জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন এবং জন্মসূত্রে তারা মার্কিন নাগরিক।
২০০০ সালে মুহাম্মাদ মুরসি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাংগঠনিকভাবে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হলেও নির্বাচনে তাকে ব্রাদারহুডের অন্যান্য নেতাদের মতো আইনত স্বতন্ত্রভাবে লড়তে হয়। কারণ হোসনি মুবারাকের শাসনামলে মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ছিল।
মুরসি ব্রাদারহুডের গুরুত্বপূর্ণ গাইড্যান্স অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন যার পরিণতিতে ২০১১ সালে ব্রাদারহুডের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক দল ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি গঠনের পর তিনিই দলটির চেয়ারম্যান পদ লাভের জন্য সবচেয়ে সম্ভাব্য ছিলেন।
মূলত দলীয় উপনেতা ও রাজনৈতিক প্রধান খাইরাত এল-শাতেরই ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের মূল রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। কিন্তু একটি আদালত প্রচারণা শুরুর আগে শাতেরসহ একাধিক প্রার্থীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করলে ব্রাদারহুড বা এফজেপি প্রার্থী হিসেবে মুহাম্মাদ মুরসির নাম উঠে আসে, যিনি মূলত সংগঠনটির দ্বিতীয় মনোনয়ন ছিলেন। পরে এফজেপি মুরসিকে তাদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে।
ব্রাদারহুডের এক দলত্যাগী জনপ্রিয় নেতার অংশগ্রহণ সত্ত্বেও মুহাম্মাদ মুরসি ২০১২ সালের নির্বাচনে ২৫.৫ শতাংশ ভোট পান, যা ছিল সর্বোচ্চ।
প্রথম পর্বের পর মুহাম্মাদ মুরসি এবং আহমেদ শফিক দ্বিতীয় পর্বের চূড়ান্ত ভোটাভুটির জন্য মনোনীত হন।
দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনের আগে মুহাম্মাদ মুরসি মিশরের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহমেদ শফিকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহবান জানান।
মুরসির রাজনৈতিক দল আহমেদ শফিককে, যিনি সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান যিনি হোসনি মুবারাকের অধীনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুহাম্মাদ মুরসি তার বিজয় ভাষণে ঘোষণা দেন, তিনি মিশরের বর্তমান আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, প্রত্যক্ষ ভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলবেন এবং ভূরাজনীতিকভাবে ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হবেন। তিনি সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ও বিদ্রোহীদের সাহায্য করার জন্য বিশ্ববাসীকে আহবান করেন।
Credit: সময়টিভি