চলতি বছরের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজপথ যখন সরগরম, তখন বিখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ‘ভুয়া খবর’ ছড়িয়ে সমস্যা উসকে দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই আলোকচিত্রীকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শহিদুল আলমের বিষয়ে এ মনোভাবের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
১২ অক্টোবর, শুক্রবার শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থাটি। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় শহিদুলের নানা তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। যদিও নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দেননি।
শহিদুল আলমের পরিবার ও আইনজীবীরা অবশ্য এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।
আগস্টে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে শহিদুল আলম মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক টেলিভিশন আলজাজিরাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে বাসা থেকে আটক করে। তার আটকের ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, নোবেলজয়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তার মুক্তির পক্ষে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে।
শহিদুলের আত্মীয় দিলরুবা করিম শেখ হাসিনার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রয়টার্সকে বলেন, বিচারের আগেই সরকার তাকে দোষারোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটাই প্রমাণ করে, তারা (সরকার) তাদের রায় দিয়ে দিয়েছে।’
শেখ হাসিনার মন্তব্যকে ‘খুবই নির্দয়’ হিসেবে মন্তব্য করে দিলরুবা করিম বলেন, ‘তথাকথিত গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে তার এমন মন্তব্য মানানসই নয়।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আতাউর রহমান রয়টার্সকে বলেন, ‘নিরপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি অপরাধী থাকবেন। আমাদের এখানে উল্টো সিস্টেম। শহিদুলের মতো পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে ভেবে মানুষ এখন বিতর্কে জড়াতে চায় না।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অবশ্য বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে ‘সম্পূর্ণ স্বাধীন’ বলে দাবি করেছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আটকের পর সরকার শহিদুল আলমকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে গ্রেফতার দেখিয়েছে। এ আইনটি নিয়ে বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে তীব্র সমালোচনা আছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই আইনের সমালোচনা করে বলেছে, মুক্তমত ও সরকারের সমালোচকদের দমাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এই আইনটি ব্যবহার করছে।
প্রিয়