কাঁচি কবিরাজের ঝাড়-ফুঁক দেওয়া তেল ও পানিতেই সেরে যাবে যেকোনো রোগ, পূরণ হবে মনোবাসনা, সমাধান মিলবে হাজার মুশকিলের। লোকমুখে এমন খবর পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে আসছে মানসিক রোগী, প্রতিবন্ধী, বাত-ব্যথা, সাপে কাটাসহ হাজার-হাজার মানুষ।
ঘটনাটি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের বর্তা গ্রামের রাজমিস্ত্রী উজ্জল মিয়া ওরফে কাঁচি কবিরাজের বাড়িতে। তিনি একসঙ্গে ৫০০ থেকে ১ হাজার নারী-পুরুষকে লাইনে দাঁড় করান। তেল ও পানির বোতল আকাশের দিকে তাঁক করে রাখার নির্দেশ দেন নারী-পুরুষদের। পরে লোহার তৈরি কাঁচি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঝাড়-ফুঁক দেন।
জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে উজ্জল মিয়ার মা হেনা আক্তার বাড়ির পাশে লাকড়ি কুঁড়াতে গেলে তাকে সাপে কাটে। পরে বাড়িতে এসে তার ছেলে উজ্জলের কাছে সাপে কাটার কথা বললে সাপের বিষ অলৌকিক ক্ষমতার মাধ্যমে উজ্জল তার নিজের শরীরে নিয়ে নেন। তারপর বিষয়টি জানাজানি হলে প্রথমে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন উজ্জল। পরে বাত ও ব্যথার জন্য পানি ও সরিষার তেল পড়া দিয়ে স্থানীয় ফারুখ মিয়ার স্ত্রী জাহেরা খাতুন ও এনামুলের বাতের ব্যথা ভালো করেন তিনি।
ওই ঘটনার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার ঝাড়-ফুঁক দেওয়া তেল ও পানি নিতে শত শত উৎসুক মানুষের ঢল নামে। এ তেল ও পানি পড়ার বিনিময়ে কোনো প্রকার টাকা বা উপহার নেন না বর্তমানে ‘কাঁচি কবিরাজ’ হিসেব পরিচিত উজ্জল। এখন প্রতিদিন তেল ও পানি পড়া নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ আসে তার কাছে।
প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে ও কাঁচি কবিরাজের খাদেমদের কাছ থেকে চোখে পরার মতো কোনো রোগী সুস্থ হয়েছে বা কারো মনোবাসনা পূরণ হয়েছে এমন তথ্য মিলেনি। যারা কোনো প্রকার উপকারিতা না পান, তাদের বলা হয় একদিনে এটা হবে না, নিয়ম করে অন্তত তিন দিন তার কাছে আসতে হবে।
নেত্রকোনা থেকে সুফিয়া বেগম (৭০) কোমরে বাতের ব্যথার জন্য সেখানে যান। এটি তার চিকিৎসার দ্বিতীয় দিন। দিন-তারিখ-সময়-মুহূর্ত সবই নিয়মমাফিক মোট তিন দিন আসতে হবে এখানে। বৃদ্ধা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, ‘বাবারে, যে নিয়ম দিছে কবিরাজ, ওইডা আমি মাইনা (মেনে) চলবার পারতামও না। আমার কম্মর (কোমর) বেদনাও (ব্যথা) বালা অইতো না।’
কিশোরগঞ্জ থেকে প্রতিবন্ধী ছেলে রাছেলকে (১৫) নিয়ে আসা বাদল ফকির বলেন, ‘আমার পাশের গ্রামের এক বোবা মেয়ে নাকি এখানে এসে ভালো হয়েছে। তাই আমার ছেলেকে নিয়ে আসলাম। দেখি আল্লাহ্ কি করে। ওই বিশ্বাস থেকেই এখানে আসা।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাসট্যান্ড থেকে ওই এলাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকসহ স্থানীয় কয়েকজনের একটি চক্র আগত নারী-পুরুষদের আগ্রহের সঙ্গে জানাচ্ছেন রোগমুক্তি ও মুশকিলআসানের গল্প। তারা দাবি করছেন, নিজের চোখে দেখারও।
আসাদ নামের এক যুবক বলেন, ‘তার পরিচিত বেশ কয়েকজন বাত-ব্যথা, অন্ধ, বোবা, শ্বাসকষ্টের রোগীরা এখানে এসে সুস্থ হয়েছে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান এস এম আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি খোঁজ নিতে সশরীরে সেখানে গিয়েছি। কেউ কেউ বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে ভালো হচ্ছে বলে দাবি করছে স্থানীয়রা। তা ছাড়া ওই কবিরাজ তেল ও পানি পড়ার বিনিময়ে কোনো টাকা বা উপহার নিচ্ছেন না।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়টা খতিয়ে দেখার দরকার আছে। আমরা অনুসন্ধান করছি। অতি শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে উজ্জল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে স্বপ্নযোগে তিনি এ চিকিৎসা পেয়েছেন বলে জানান।