রাজধানীর শিল্পাঞ্চল থানার ওসিকে পিটিয়ে কাঁধের হাড় ভেঙে দিয়েছেন অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক বিশেষ পুলিশ সুপারের দুই কেয়ারটেকার। ঘটনার শিকার ওসি মো. আব্দুর রশিদ ঘটনার পরদিন রাতে অভিযুক্ত দুই কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। তাদের ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে গত সোমবার ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় অভিযুক্ত দুই আসামিকে নিজ জিম্মায় জামিন নিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমীন। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, নাজমুল আলম ও মো. মিলন তার বাসার কর্মচারী। বাদীর সঙ্গে তাদের ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই মামলার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি সমঝোতার উদ্যোগ নেবেন।
শুনানি শেষে ঢাকা সিএমএম আদালত ওই এসপির জিম্মায় দুই কেয়ারটেকারকে জামিন দেন। এর আগের দিনও ওই দুজনের জামিন আবেদন করা হয়। পুলিশের আপত্তির কারণে আদালত তাদের জামিন দেননি।
শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আব্দুর রশিদ মামলায় উল্লেখ করেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে থানায় ফেরার পথে ভিকারুনন্নিসা নূন স্কুলের ২ নম্বর গেটের সামনে বন্ধু মো. সালামের সঙ্গে তার দেখা হয়। এ সময় তারা দুজনই সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে নামেন। একপর্যায়ে মো. সালাম চা পানের জন্য ওসিকে পীড়াপীড়ি করেন এবং চা আনার জন্য চালককে নিয়ে পার্শ্ববর্তী দোকানে যান। এ সময় এক মধ্যবয়সী নারী নাজমুল আলম ও মো. মিলনকে দিয়ে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুলের পূর্বপাশের দেয়াল সংলগ্ন ফুটপাত ও রাস্তা পরিষ্কার করাচ্ছিলেন। তারা মো. সালামের গাড়ির পাশে অপেক্ষমাণ ওসিকে গাড়িটি সরিয়ে নিতে বলেন।
এ সময় ওসি বলেন, চালক চা নিয়ে এলেই তারা গাড়ি দুটি সরিয়ে নেবেন। কিন্তু ওই দুজন কোনো কথা না শুনে ওসির পরিচয় জানতে চান। ওসি নিজ পরিচয় দেওয়ার পরও তার কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চান কেয়ারটেকাররা। কিন্তু পরিচয় নিশ্চিত হলেও ওসি আব্দুর রশিদকে পথচারীদের সামনে ‘ভুয়া পুলিশ’ আখ্যা দিয়ে লাগাতার ব্যঙ্গ করতে থাকেন নাজমুল ও মিলন।
তখন ওসি তার বন্ধুকে ডেকে এনে গাড়ি সরিয়ে নিতে বলেন। বন্ধু সালাম গাড়িতে উঠে চালু করার সময় মিলন তার জামার কলার ধরে গাড়ি থেকে নিচে টেনে নামিয়ে আনেন। বন্ধুকে বাঁচাতে গেলে নাজমুল আলম ওসি রশিদকে অতর্কিত কিলঘুষি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ওসিকে লাথি দিয়ে রাস্তায় ফেলে লাঠি দিয়ে মাথায় মারার চেষ্টা করেন নাজমুল। পাশ কেটে গেলে লাঠির আঘাত থেকে মাথা রক্ষা পেলেও তার বাম কাঁধের হাড় ভেঙে যায়।
এদিকে ওসির বন্ধু সালামকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারছিলেন মিলন। একপর্যায়ে আহত ওসিকে টেনেহিঁচড়ে সিদ্ধেশ্বরী রোডের ৬১/বি/এ নম্বর ‘কনকর্ড মেঘনলিয়া’র পার্কিং ফ্লোরে নিয়ে যান তারা। গেট বন্ধ করে সেখানেও রড দিয়ে আব্দুর রশিদকে এলোপাতাড়ি পেটান নাজমুল আলম ও মো. মিলন। এ সময় ওসি ও তার বন্ধুর চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এসে তাদের রক্ষা করেন। খবর পেয়ে রমনা থানার পরিদর্শক (অপারশেনস) মো. মাহফুজুল হক ভূঞাসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহতদের উদ্ধার করেন; আটক করেন নাজমুল আলম ও মো. মিলনকে। পরে আব্দুর রশিদকে ভর্তি করা হয় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই মো. জুলফিকার আলী সরদার গত শনিবার দুই আসামিকে কোর্টে পাঠিয়ে তাদের জামিনের বিরোধিতা করেন।
শিল্পাঞ্চল থানার ওসি সোমবার রাতে আমাদের সময়কে বলেন, এ ঘটনায় মামলা করেছি। শুনেছি আসামিরা সোমবার জামিন পেয়েছেন। মামলার সমঝোতা প্রসঙ্গে বলেন, যেভাবে হামলা করা হয়েছে, আঘাতের কারণে আমাদের মৃত্যুও হতে পারত। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওসি আব্দুর রশিদ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমীনের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।