বাংলাদেশে যে কয়জন সাংবাদিক নেতা আওয়ামী লীগের দালাল হিসেবে পরিচিত তাদের অন্যতম হলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি সব সময় সাংবাদিকদের অধিকার ও স্বার্থের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখে থাকেন। সহজ কথায় বললে যেখানে স্বার্থ নেই সেখানে ইকবাল সোবহান নেই।
এদেশে সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি হলো সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এই সাংবাদিক দম্পতির কাছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির অনেক গোপন নথি ছিল। যে দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত ছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা মারফত এই তথ্য জানার পরই দুর্নীতি চাপা দিতে এই সাংবাদিক দম্পতিকে তাদের বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে যখন সাংবাদিক সংগঠনগুলো রাস্তায় নেমে আসে তখনই তথ্য উপদেষ্টার পদ দিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে কিনে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু উপদেষ্টার পদই নয়, শত কোটি টাকা টাকা দিয়ে ডিবিসি নামে একটি টিভি চ্যানেলের মালিকও বানিয়ে দেন তাকে। এরপর থেকেই সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন আস্তে করে ঝিমিয়ে পড়ে। এখন বিচারতো দূরের কথা ৫২ বার তারিখ দিয়েও আজ পর্যন্ত অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি পুলিশ।
সুবিধাবাদী ইকবাল সোবহান চৌধুরীর কর্মকাণ্ডে বিব্রত সাংবাদিক সমাজ। তিনি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নীতি-নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে সরকারের সকল অপকর্মকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে সরকার যে কালো আইন পাস করেছে এটার পেছনেও ইকবাল সোবহানের হাত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইকবাল সোবহানের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ফেনীতে তার পরিবারের লোকজনও দেদারছে অপকর্ম করে যাচ্ছে। এমনকি মাদক ব্যবসার সঙ্গেও তার পরিবারের লোকজনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। সম্প্রতি তার ভাই, ভাতিজা ও ভাবি অস্ত্র ও মাদকসহ র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম সিটি গেট এলাকা থেকে র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৭) সদস্যরা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ভাই মাছুম সোবহান চৌধুরী (৪০), তার স্ত্রী উপমা চৌধুরী (২৬), ভাতিজা ইফফাত চৌধুরী (১৮), শাহাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও হানিফকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করে। পরে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের পৃথক তিনটি মামলায় চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদেরকে।
র্যাব ও আকবর শাহ থানা সূত্র জানায়, ২৬ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ১টার দিকে চট্টগ্রামের সিটি গেইট এলাকায় চেকপোস্ট বসায় র্যাব। এখানে সন্দেহবশত একটি প্রাইভেটকার থামানোর সঙ্কেত দিলে তারা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় র্যাবও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে চাকা ফেটে গাড়িটি থেমে যায়। এসময় গাড়িতে থাকা পাঁচজনকে র্যাব আটক করে।
গাড়ি তল্লাশি করে ৪শ’ ৯৬ বোতল ফেনসিডিল, দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে ইফফাত ও মো: হানিফ আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর তিনজনকে বৃহস্পতিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কারাগারে প্রেরণ করা হয়। শুক্রবার রাতে আকবর শাহ থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অস্ত্র ও মাদকসহ ইকবাল সোবহান চৌধুরীর পরিবারের লোকজন গ্রেফতার হওয়ার পর ফেনীতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে যায়। স্থানীয়রা বলাবলি করছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা বিগত ৫ বছর যাবত মাদক ব্যবসা করে আসছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাদের এসব অপকর্মের কথা জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। ইকবাল সোবহান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হওয়ার কারণে পুলিশ প্রশাসনও তার পরিবারের সদস্যদেরকে কিছু বলতে পারেনি।