সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে ড. কামাল হোসেন এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বৈঠক হয়েছে। যদিও এরশাদের ভ্রমণসঙ্গীরা দাবি করেছেন দুই নেতার সাক্ষাৎ কাকতালীয়। দুজন একই হাসপাতালে চেকআপের জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে হঠাৎ তাঁদের দেখা হয়। । দুজন কুশল বিনিময় করেছেন মাত্র। কিন্তু একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, কামাল-এরশাদের বৈঠক পূর্ব নির্ধারিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এরশাদের দল জাতীয় পার্টি যেন বর্জন করে, তার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
অনেকেই বলছিলেন, হঠাৎ করেই ড. কামাল হোসেনের বিদেশ যাত্রা রণে ভঙ্গ দেওয়ারই শামিল। কেউ কেউ এটাও বলেছেন, ড. কামাল সবসময়ই এটা করেন। আন্দোলন উস্কে দিয়ে তিনি সটকে পড়েন। কিন্তু এবার ড. কামাল হোসেনের বিদেশ যাত্রা তেমন ছিল না বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন। এজন্যই তিনি সবার অলক্ষ্যে সিঙ্গাপুরে যান। আর সিঙ্গাপুরে তিনি সোজা পথে যাননি। ব্যাংকক হয়ে তারপর সিঙ্গাপুর গেছেন। ড. কামাল হোসেনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন নয় বরং নির্বাচন বন্ধের জন্যই ড. কামাল চেষ্টা করছেন। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, এত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আন্দোলন করে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা সম্ভব নয়। দাবি আদায় ছাড়া নির্বাচন করেও কোনো লাভ নেই। এ কারণেই ড. কামাল সব দলগুলোকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছেন। ড. কামাল মনে করছেন, জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্য যদি নির্বাচন না করে, সেক্ষেত্রে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪’র থেকেও একতরফা হবে। তখন ঐ নির্বাচন আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ভাবেও গ্রহণযোগ্য হবে না। ঐ নির্বাচন সরকার বাতিল করতে বাধ্য হবে। তখনই একটি নির্দলীয় সরকারের ক্ষমতায় আসার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ড. কামাল হোসেনের ঘনিষ্ঠরা বলছে, তিনি জ্বালাও পোঁড়াও ঘেরাও এর মতো ধ্বংসাত্মক রাজনীতির ধারায় বিশ্বাসী নন। ঐ পদ্ধতিতে দাবি আদায়ের ব্যাপারটি তিনি সমর্থনও করেন না। একই অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ড. কামাল হোসেনকে পৃষ্ঠপোষকতা দানকারী দেশগুলোর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো বার বার বলছে, তাঁরা বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। ড. কামাল হোসেন চাইছেন, ২০ দল, যুক্তফ্রন্ট, ঐক্য প্রক্রিয়া, বাম মোর্চা এবং জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন বর্জনের পথে নিয়ে যেতে। সব দলগুলোই যদি বলে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই তাঁরা নির্বাচন বর্জন করছে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়বে। ড. কামাল হোসেনে ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন বিরোধী প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে আন্দোলনের দরকার হবে না। কারণ, ২০১৪’র মতো নির্বাচন এবার আর আন্তর্জাতিক মহল মেনে নেবে না। এমনকি জাতীয় ঐক্যের নেতারা বলছেন, ভারতও বলেছে তাঁরা বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। তাই, আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল যদি শুধু নির্বাচন করে, সেক্ষেত্রে এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তেমন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় বসলেও তা টেকসই হবে না। তখন তারা (আওয়ামী লীগ) নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে বাধ্য হবে।
তবে, ড. কামাল-এরশাদ বৈঠকের ফলাফল জানা যায়নি। এরশাদ ড.কামালের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটবেন কিনা তাও স্পষ্ট নয়।
বাংলা ইনসাইডার