ব্রেকিং নিউজ
Home / অপরাধ জগৎ / তফসিলের আগেই বিরোধীদের দমন! আ লীগের হাতে যে পরিকল্পনা

তফসিলের আগেই বিরোধীদের দমন! আ লীগের হাতে যে পরিকল্পনা

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিরোধীদের দমন করতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরনো মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে। পাশাপাশি যোগ হচ্ছে নতুন নতুন অনেক ধরনের মামলা। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হবে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের। এ ছাড়া বিশেষ বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী একাধিক গ্রেফতার অভিযান চালানো হবে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগ এবং সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীনদের আশঙ্কা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি জোটের সম্ভাব্য আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে দেশব্যাপী সহিংসতা ও নাশকতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন সরকারের সময় সরকারবিরোধীরা দেশব্যাপী সহিংসতা শুরু করতে পারে বলে সরকারের কাছে নানা সূত্রে তথ্য রয়েছে। আর নির্বাচনকালীন সরকারের কারণে ওই সময় প্রশাসনের ওপর সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণও খানিকটা শিথিল হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য তফসিলের পর বড় ধরনের কোনো আন্দোলন যাতে দানা বাঁধতে না পারে তার আগেই বিরোধীদের দমনের চিন্তা করছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে মামলা, অভিযান ও গ্রেফতার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে প্রশাসন।

সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় সরকার। বিশেষ করে নির্বাচনী তফসিলের আগে বা পরে সরকারবিরোধী বড় ধরনের কোনো আন্দোলন চান না নীতিনির্ধারকেরা। সেই লক্ষ্য পূরণে শুরুতেই প্রশাসনকে কাজে লাগাতে চায় সরকার। এ ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে সারা দেশে দায়ের হওয়া জ্বালাও, পোড়াও, ভাঙচুর ও নাশকতা মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হবে বিরোধীদের।

এগুলোর সাথে যোগ হবে নতুন নতুন মামলা। সর্বশেষ গত রোববার রাতে ও সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় দু’টি মামলা করে পুলিশ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, পুলিশি কাজে বাধা প্রদান এবং উসকানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। বিএনপি দাবি করেছে ওই দিনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে তাদের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের অনেককে হাতিরঝিল থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গত এক মাসে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মামলা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এসব মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, মহিলাদলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের চাপে রাখার জন্যই এসব মামলা করে রাখা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রগুলো আরো জানায়, বিএনপি জোটের সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবেলায় নির্বাচনী তফসিলের আগেই বিশেষ বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে একাধিক অভিযান চালানো হতে পারে। অভিযানে আটককৃতদের নতুন ও পুরনো এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। এর ফলে তফসিলের পর বড় কোনো আন্দোলন বিএনপি জোট করতে পারবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিএনপিকে সভা-সমাবেশের সীমিত সুযোগ দেয়া হলেও সেসব কর্মসূচি সামনে রেখেও ধরপাকড় চলতে থাকবে। গত রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশ থেকেও অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে সমাবেশকে সামনে রেখে সারা দেশেই ধরপাকড় চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আন্দোলন দমনে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রাখা হতে পারে।

প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) সদর দফতরে ডেকে খোলাসা করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এ সময় নিজ নিজ এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাগজে-কলমে নানা ছক তৈরি হয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিরোধী নেতাকর্মীদের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সে জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অভিযানকে প্রধান কৌশল হিসেবে বিবেচনায় এসেছে। ইতোমধ্যেই রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা সংগ্রহ এবং সরকারবিরোধী কর্মীদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এসব তালিকা নিজ নিজ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার যাচাই-বাছাই করছেন। এ তালিকা ধরেই বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগামী ১০ অক্টোবর বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। এ রায়কে কেন্দ্র করে আগে বা পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা সারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। সে জন্য রায়ের আগে আরেক দফা গ্রেফতার অভিযান চালানো হতে পারে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তফসিলের আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী জোটের তৎপরতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তারা যেকোনো সময় নাশকতা শুরু করতে পারে বলে সরকারের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য আসছে। বিশেষ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর পরই তারা পুরোদমে মাঠে নেমে পড়তে পারে এমন আলোচনা রয়েছে। সরকারও তা মোকাবেলায় একাধিক কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। তাদের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবে সরকার। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দমনপীড়ন অব্যাহত রাখবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপিতো রাজনীতির নামে নাশকতা করে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য যা যা করার সব ষড়যন্ত্রই করছে তারা। তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় সজাগ রয়েছে। ৫ জানুয়ারির আগে তারা দেশে নাশকতা, জ্বালাও, পোড়াও করে হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়েছে। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। আর সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ এসব মামলার আসামি তথা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করছে। এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নৈতিক দায়িত্ব। তবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবে আওয়ামী লীগ।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির জন্মই হয়েছে ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। সে জন্য তারা ষড়যন্ত্র, নাশকতা আর ধ্বংসের রাজনীতি থেকে বের হতে পারেনি। এটি আপাদমস্তক একটি সন্ত্রাসী দল। এই দলের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে পরে সারা দেশে তারা এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। জ্বালাও, পোড়াওয়ের মাধ্যমে সারা দেশে হাজারো নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে তারা। এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এখন নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করে বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত এবং তারেক রহমানকে এ দেশের রাজনীতিতে আনতে চায় তারা। প্রশাসনের পাশাপাশি দেশের আপামর জনগণকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।