‘বেনিফিট অব ডাউট গোজ টু দ্য বোলার… উই ক্যান লার্ন এভরি ডে’- সংক্ষুব্ধ এক সাবেক ক্রিকেটার এবং বর্তমানে ক্রীড়া সাংবাদিকের ফেসবুক পোস্ট এটা। লিটন দাসকে বিতর্কিত আউট করা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে পুরো সোশ্যাল মিডিয়া। আউট নয়, অথচ জোর করে লিটনকে আউট ঘোষণা করা হলো থার্ড আম্পায়ারের পক্ষ থেকে। যার কারণে থেমে গেলো লিটনের ১২১ রানের ইনিংস। অন্য ব্যাটসম্যানরা যখন বাজে ব্যাটিংয়ের পরিচয় দিচ্ছিল, সেখানে লিটনই ছিলেন বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র রাহবার। কিন্তু একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বলি হয়ে মাঠ ছেড়ে যেতে হলো তাকে।
শুরু থেকেই দারুণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন কুমার দাস। ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরিটাও তুলে নেন তিনি মাত্র ৮৭ বলে। ১২১ রান নিয়ে তিনি বাংলাদেশের ইনিংসকে সগর্বে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
এমন সময়ই বিতর্কিত সিদ্ধান্তটির মুখোমুখি হলো লিটন কুমার দাস এবং বাংলাদেশ। ৪১তম ওভারে ইয়ুজবেন্দ্র চাহালের শেষ বলটি একটু এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিস করেন লিটন। বলটি ধরে সঙ্গে সঙ্গেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন কিপার ধোনি। আউটের আবেদন করলে ফিল্ড আম্পায়ার থার্ড আম্পায়ার কল করেন।
টিভি আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন রড টাকার। বারবার রিপ্লে দেখা হলো। নানা কোন থেকে বিশ্লেষণ করা হলো। সব দেখাতেই, সব বিশ্লেষণেই দেখা যাচ্ছিল, স্ট্যাম্প ভাঙার আগেই লিটনের পা লাইন স্পর্শ করে ফেলেছিল। এমনকি পা ছিল গ্রাউন্ডেই। এই প্রথম দেখা গেলো, পায়ের অবস্থান ৪এক্স ক্যামেরায় ম্যাগনেটিক গ্লাস দিয়েও পর্যবেক্ষণ করতে। এমনকি স্ট্যাম্প ক্যামেরা দিয়ে দেখা হলো। সেখানেও দেখা গেলো লিটনের পা লাইন স্পর্শ করার পরই স্ট্যাম্প ভাঙা হলো। তবুও থার্ড আম্পায়ার তাকে আউটের সিদ্ধান্ত দিলেন।
লিটন দাসকে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়ে আউট দেয়ার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে ঝড় ওঠে। পক্ষে বিপক্ষে শুরু হয় অনেক কথা লেখা। আইসিসির টুইটেই রিটুইট হয়েছে অসংখ্য। নেহা নামে একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশ বনাম ভারত ম্যাচ দেখতে চাই, বাংলাদেশ বনাম আইসিসি ম্যাচ নয়।’ পরে আরও একটি টুইটে তিনি লিখেন, ‘যদি এখানে আউট কিংবা নট আউট সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে বেনিফিট অব ডাউট নিয়মে সিদ্ধান্তটা ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যায় সব সময়। বিষয়টা হচ্ছে, নিয়মটা কোনোভাবেই ভারতের একার জন্য নয়।’
মিরাজ রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘এটা কোনোভাবেই আউট নয়। রড টাকারের পক্ষ থেকে খুবই বাজে আম্পায়ারিং। আম্পায়ারের পক্ষ থেকে একটা বাজে আউটের সিদ্ধান্তের শিকার হলো বাংলাদেশ এবং এটা গেলো ভারতেরই পক্ষে। এটা কি ইনজাস্টিস নয়?’
সাঈদ ইব্রাহিম জাজাই নামে একজন লিখেছেন, ‘আমি মহেন্দ্র সিং ধোনির একজন বড় ভক্ত। কিন্তু আইসিসির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই একমত হতে পারছি না। এটা আউট নয়।’
তাহসিন নামে এজন লিখেছেন, ‘যদি এটা ফোর এক্স জুম ক্যামেরা দিয়ে এই আউটটাকে স্পষ্ট করা হয়, তাহলে কেন প্রথমবার ফোর এক্স ক্যামেরা দিয়ে দেখার পর আউট দেয়া হলো না? তিনি (থার্ড আম্পায়ার) বেশ কয়েকবার কয়েকটি এঙ্গেল থেকে দেখেছেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জুম করে দেখেছেন তিনবার। আম্পায়ার নিজেই সিদ্ধান্তহীন। এমন অবস্থায় সিদ্ধান্তগুলো ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যা।’
লোকেশ বাট নামে একজন লিখেছেন, ‘বেশ কয়েকটি অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে পা লাইনের বাইরে ছিল না। আম্পায়ার কি কোনোভাবে অন্য কোনো অ্যাঙ্গেল দিয়ে দেখে প্রমাণ করতে পারবেন যে পা লাইনের বাইরে ছিল?’
মোহাম্মদ ফজলুল করিম নামে একজন লিখেন, ‘আপনি কি জানেন? বেনিফিট অব ডাউট সব সময়ই যায় হচ্ছে ব্যাটসম্যানের পক্ষে। ওহহ, আপানারা তো আবার ইন্ডিয়ান!’
রতিন আর রহমান নামে একজন ফেসবুকে এমসিসির ধারা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ফোর এক্স ক্যামেরায় তিনটা বা চারটা এঙ্গেল থেকে রিপ্লে দেখানো হয়েছে। শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে পা দাগের ভেতরে আছে। এরমধ্যে শেষেরটায় অর্থাৎ উইকেটকিপারের দিক থেকে যখন জুম করা হলো, তখন ক্লিয়ার বোঝা গেল যে ঠিক যে মুহুর্তে বেলসটা ডিসপ্লেস হয়েছে, সেই মুহুর্তে লিটনের পা দাগের চুল পরিমাণ হলেও ভেতরে ছিল। এরপরেও যদি আম্পায়ারের মনে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ থাকে, মনে হয় যে আউট হতে পারে, সেক্ষেত্রে এমসিসির ল’জ অফ ক্রিকেটের ৩১.৬ ধারায় স্পষ্ট লেখা আছে – ‘If an umpire is doubtful about any point that the other umpire may have been in a better position to see, he/she shall consult the latter on this point of fact and shall then give the decision. If, after consultation, there is still doubt remaining, the decision shall be Not out.’
২০১২ সালে ভারতের সাথে এশিয়া কাপের ফাইনালে যাওয়ার ম্যাচে সাকিবকে ঠিক এইরকমই একটা আউট দিয়েছিল শ্রীলংকার আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরুগে। আজকে রড টাকার দিল এমন একটা আউট। মুশফিকের অকল্পনীয় মারে সেদিন ২৯০ রান তাড়া করে জিতে গিয়েছিলাম আমরা, আজ কি পারবো? আজ পারাটা যে বড় দরকার!’
ফখরুল মিয়াজি নামে একজন তো দাবিই করলেন, বাংলাদেশ বলেই এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছে আম্পায়ার। তিনি লিখেন, ‘হ্যালো আম্পায়ার! এটা কিভাবে আউট হয়? আমি জানি এর মূল কারণ। কারণ হচ্ছে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওকে, এটা এখন আর জেন্টলম্যান গেম নয়।’
তারিনুল আমিন লিখেছেন, ‘আইসিসি! ভেরি গুড ট্রাই ফর ইন্ডিয়া। খুব ভালো। ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্য প্রতারণার পর প্রতারণা করে যাচ্ছে তারা। আইসিসি, দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। লজ্জা তোমাদের জন্য।’ আরেকজন সমর্থক লিখেছেন , ‘বেনিফিট অব ডাউট পাওয়া উচিত ছিল লিটন দাসের; কিন্তু দিলেন না থার্ড আম্পায়ার। স্যাটেলাইটের কল্যাণে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব দেখল কিভাবে আরেকবার নোংরামির শিকার হলো বাংলাদেশ।’