অবরুদ্ধ কেন্দ্রীয় কার্যালয়। মামলা-হামলায় জর্জরিত শীর্ষ নেতারা। গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন দলের বেশির ভাগ সিনিয়র নেতা। কেন্দ্র থেকে ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি সফল করছেন দলের তৃণমূল কর্মীরা। কিন্তু থেমে নেই সরকারের তৎপরতা। নির্যাতনের খড়গ নেমে আসছে তাদের ওপরও। দলের এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্দোলনের সমন্বয়কের
দায়িত্ব নিজেই হাতে তুলে নিয়েছেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। তিনি সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে। আন্দোলন চাঙ্গা রাখতে তাদের দিচ্ছেন নানা দিক-নির্দেশনা। মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদেরও দিচ্ছেন সান্ত্বনা। কর্মীদের উজ্জীবিত করতে চলমান রাজপথের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার বার্তাও দিচ্ছেন তিনি। দলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তাকে এই বার্তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তারাও দলের চেয়ারপারসনের এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তৃণমূলে। জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীদের তালিকা ধরে ফোন করছেন। খোঁজ নিচ্ছেন কোন জেলায় কতজন নেতাকর্মী সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলের নেতাকর্মীদের হামলায় নিহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন, মামলা-হামলা শিকার হচ্ছেন। দলের চেয়ারপাসনের এই বার্তা পেয়ে তৃণমূল কর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছেন। এদিকে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিরোধী জোটের ডাকা দেশব্যাপী টানা ৮৩ ঘণ্টার অবরোধ। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বার্তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পাওয়া এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আমাদের কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য। এবং বিরোধী নেতা কয়েকটি বার্তাও দিয়েছেন। যেমন চলমান আন্দোলনে সরকার হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার নির্যাতনের মাত্রা যতই বাড়াক না কেন এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগের নির্বাচনের জেতার সৎ সাহস থাকলে এভাবে একতরফা নির্বাচন করতো না। তাই চলমান আন্দোলনে আমাদের বিজয় হবেই। এছাড়া শিগগিরই বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবেন। তিনি বলেন, আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের ফোন করে ওই বার্তাগুলো পৌঁছে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে বরিশাল, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ বেশ কয়েকটি জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওই সব জেলা, উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকদের অবহিত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে এভাবে যোগাযোগ করা হবে। দলের চেয়ারপারসনের তরফ থেকে ফোন পেয়ে ইতিমধ্যেই রাজধানীর বেশ কয়েকজন সাবেক ওয়ার্ড কমিশনারসহ থানা পর্যায়ের নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। সরাসরি খালেদা জিয়ার কাছ থেকে আন্দোলনের নির্দেশনা গ্রহণ করেন তারা। এদিকে সরাসরি খালেদা জিয়ার ফোন পেয়ে উজ্জীবিত মাঠ পর্যায়ের এসব সক্রিয় নেতা। দলীয় সূত্র জানায়, সামনের আন্দোলন কর্মসূচিতে খালেদার এই তৎপরতার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে অচিরেই খালেদা জিয়া নিজেই মাঠে নামবেন বলে জানা গেছে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে। এতে যে কোন অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আন্দোলন যেন আরও জোরদার হয় সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন খালেদা জিয়া। গতকাল চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন জাতীয় প্রেস ক্লাবে দেয়া বক্তব্যে বলেন, ‘সময় খুব অল্প, এ সময়ের মধ্যে গণতন্ত্রকে বহাল রেখে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তা না হলে শিগগিরই খালেদা জিয়া নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করতে রাজপথে নামবেন। তিনি যেদিন মাঠে নামবেন সেদিন সারা দেশে আগুন জ্বলবে। তবে আমরা সেটা চাই না। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী পেশাজীবীদের একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়ার রাজপথে নামার ইঙ্গিত দেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী। তিনি বলেন, দেশবাসী তৈরি থাকুন, আন্দোলন তীব্র করতে শিগগিরই রাজপথে নামবেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া।
গত ২৫শে নভেম্বর ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মূলত এরপর থেকেই বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়। গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ কৌশলে নয়াপল্টন কার্যালয়ে অবস্থান নেন। দলের দপ্তরের দায়িত্ব চালিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন। ফলে চাঙ্গা ছিল তৃণমূলের আন্দোলনও। কিন্তু গত ২৯শে নভেম্বর কার্যালয়ের গেটের তালা ভেঙে গ্রেপ্তার করা হয় রিজভী আহমেদকেও। এরপর দপ্তরের দায়িত্ব দেয়া হয় আরেক যগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে। পুলিশের গ্রেপ্তারি তৎপরতার কারণে তিনিও প্রকাশ্যে আসতে পারেননি। অজ্ঞাত স্থান থেকেই বিবৃতি ও ভিডিওবার্তার মাধ্যমে দলের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় দলের দপ্তরের। জাতিসংঘের মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর ঢাকা সফরকালীন মির্জা আলমগীরসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা প্রকাশ্যে আসেন। এরপর থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছেন। তবে এখনও অবরুদ্ধ রয়েছে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
কবে নামবে কে জানে এই ভীরুরা কবে যে সাহসী হবে। দেখা আপেক্ষা আ্ছি । আশা করি পরিবর্তন হবে।