মঙ্গলবার (২৬ জুন) অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সেখানে পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার (২৭ জুন) সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যমে হুমকি দিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানসহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গাজীপুরে স্থগিত হওয়া ৯টি কেন্দ্র বাদে নির্বাচনের বাকি ৪১৬ কেন্দ্রের ভোটের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীকে ৪ লাখ ১০টি ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ধানের শীষে পড়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার আবার প্রমাণ করলো তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য নির্লজ্জভাবে একের পর এক স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ভোট ডাকাতি করে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করছে। খুলনায় নতুন কৌশলে ভোট ডাকাতি করে তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গাজীপুরের নির্বাচনে আরেক কলঙ্কময় অধ্যায় সংযোজন করলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে স্বৈরাচার এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সমাহিত করছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রায় প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নজীরবিহীন ভোট ডাকাতির মধ্যদিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে এবং প্রমাণ করেছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের ফলে আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিচ্ছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই গণগ্রেফতার, সাদা পোশাকের পুলিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, ভাঙচুর, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে না দেওয়া, নির্বাচনের আগের রাত থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে নৌকায় লিল মেরে ব্যালট বাক্স বোঝাই করা, নির্বাচনের দিন এজেন্টদের জোর করে বের করে দেওয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী ও দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে ক্রমাগত অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন কোনও কিছুই আমলে নেয়নি। বিশেষ করে গাজীপুরে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও নির্যাতনের বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন তাদের নিজেদের আইন কখনোই প্রয়োগ করে নাই। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল জানান, ‘বিএনপি’র আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় অংশ নিচ্ছে। আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও অংশ নেবে বিএনপি। সরকারের নির্লজ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকারগুলোতে অংশ নিচ্ছি। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্বও প্রমাণিত হচ্ছে।’
সোমবার রাতে গ্রেফতারকৃত মেজর (অব) মিজানুর রহমান সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচারণা শুরু করেছে এবং বাইরের প্ররোচনার কথা বলা হচ্ছে। মেজর মিজানকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নীল নকশার অংশ হিসেবে।’ তিনি ‘চক্রান্তের’ নিন্দা জানান এবং মেজর অব. মিজানকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করেন।