২৯ মার্চ, ২০১৬: উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে কাজ করবে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৬-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দেশের ৩৮টি পাবলিক ও ৯২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এই কাউন্সিল। এ ছাড়া সব ধরনের মেডিক্যাল, প্রকৌশল, কৃষি, ব্যবসায়, আইনসহ বাংলাদেশের ভেতরে উচ্চশিক্ষা দানকারী সব ধরনের প্রতিষ্ঠান এর আওতায় আসবে। এ বিশ্ববিদ্যালগুলোর দেখভালের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ওপর থাকলেও তারা শিক্ষার মান যাচাইয়ের জন্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারছিল না। ফলে অনেক মানহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে প্রতারিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
আইনের খসড়া অনুসারে কাউন্সিলের মূল দায়িত্ব হবে উচ্চশিক্ষার গুণমান নিশ্চিত করা, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রম অ্যাক্রেডিট (স্বীকৃতি) করা, আবেদনের পর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি গঠন, অ্যাক্রেডিটেশন ও কনফিডেন্স সনদ প্রদানের শর্ত নির্ধারণ এবং প্রয়োজনে সনদ বাতিল করা।
গতকাল বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, এটি একটি যুগান্তকারী আইন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি নির্দিষ্ট মানে উন্নীত করতে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হবে। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সনদ ছাড়া কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষার সনদ দিতে পারবে না। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভুল তথ্য দিলে বা কোনো তথ্য গোপন করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল হবে। কাউন্সিলের মূল দায়িত্ব হবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা, শিক্ষা কার্যক্রম যাচাই করে স্বীকৃতি দেওয়া। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি বিভাগ, কোর্স বা প্রোগ্রামের জন্য পৃথক কমিটি গঠন করে এ সম্পর্কে যাচাই করবে কাউন্সিল। এরপর ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ‘অ্যাক্রেডিটেশন ও কনফিডেন্স’ সনদ দেওয়া হবে। এই সনদের একটি নির্ধারিত মেয়াদ থাকবে।
কাউন্সিলে চেয়ারম্যানসহ ১১ জন সদস্য থাকবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুণগত মান ও স্বীকৃতির বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন ও প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কমপক্ষে ২৫ বছরের শিক্ষকতা (এর মধ্যে কমপক্ষে ১০ বছর অধ্যাপক) ও উচ্চশিক্ষার প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন অধ্যাপক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন। সদস্যদের মধ্যে অধ্যাপক পদমর্যাদার চারজন শিক্ষাবিদ পূর্ণকালীন সদস্য ও ছয়জন খণ্ডকালীন সদস্য থাকবেন। খণ্ডকালীন সদস্যদের মধ্যে থাকবেন ইউজিসির একজন সদস্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি বা তাঁর মনোনীত ওই অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য, কাউন্সিলের মনোনীত বিদেশি কোনো অ্যাক্রেডিটেশন সংস্থার একজন বিশেষজ্ঞ, পেশাজীবী সংস্থার একজন প্রতিনিধি ও সরকার মনোনীত ফেডারেশন অব চেম্বারের একজন শিল্পোদ্যোক্তা। এই কাউন্সিল যৌক্তিক কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা এর অধীন কোনো ডিগ্রি প্রোগ্রামের ‘অ্যাক্রেডিটেশন ও কনফিডেন্স’ সনদ বাতিলও করবে। কাউন্সিলকে তার কাজের জন্য সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
কাউন্সিল আইনে রয়েছে, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সনদ ছাড়া কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষার সনদ দিতে পারবে না। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভুল তথ্য দিলে বা কোনো তথ্য গোপন করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল হবে। এর বাইরে ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ আইনের অনুমোদিত খসড়ায় কোনো শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। আইনের প্রাথমিক খসড়ায় নিয়ম ভঙ্গের শাস্তির বিধান রাখা হলেও চূড়ান্ত খসড়ায় তা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক খসড়া আইনে নিয়ম ভঙ্গের জন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত ৩ জানুয়ারি প্রস্তাবিত আইনের ওপর অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও উপাচার্যরা (ভিসি) শাস্তি রাখার প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এরপর আর শাস্তির বিধান রাখা হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুমোদিত আইন অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ডিসিপ্লিনের জন্য পৃথক অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি গঠন করা হবে। অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি হবে তিন সদস্যের। এর মধ্যে দুজন অ্যাক্রেডিটেশন সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নিজ নিজ ডিসিপ্লিনের সিনিয়র অধ্যাপক ও একজন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, শিল্প অথবা পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি। কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর। মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রিকালচার, বিজনেস, আইন সোশ্যাল সায়েন্স, আর্টস, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, ফিজিক্যাল সায়েন্স ইত্যাদি বৃহত্তম ডিসিপ্লিনের জন্য আলাদা অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি হবে।
অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আবেদন করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের ভিত্তিতে এক বছরের জন্য কনফিডেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করবে। আর প্রোগ্রামের মানের ভিত্তিতে পাঁচ বছরের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট দেবে। অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সবার প্রদর্শনের জন্য অনলাইনে উন্মুক্ত রাখবে।
কনফিডেন্স সার্টিফিকেট ও অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট প্রদানের শর্তাবলি এই আইনের আলোকে প্রয়োজনীয় বিধিমালায় উল্লেখ থাকবে বলে জানা গেছে।
নিরীক্ষণ, মূল্যায়ন ও অ্যাক্রেডিটেশন প্রদানের জন্য কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে ফি আদায় করবে। সরকারি অর্থের পাশাপাশি এই ফি দিয়ে কাউন্সিলের তহবিল গঠিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন এ আইন প্রসঙ্গে বলেন, এ আইন অনুসারে, একটি ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক’ (জাতীয় মান কাঠামো) গঠন করা হবে। এর ফলে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সঙ্গে বিশ্বের অন্য দেশের এ ধরনের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হবে। এর ফলে ‘এক্সচেঞ্জ’ (বিনিময়) সুবিধা পাবে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা। তারা ওই সংস্থার অধীন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে বা ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা পাবে।