২৬ মার্চ ২০১৬: শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হলেও নিজ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা নিধনের বিষয়ে মিয়া্নমারের প্রভাবশালী নেত্রী অং সান সু চি বরাবরই পালন করে চলেছেন বিস্ময়কর নিরবতা।
গণমাধ্যমের তীব্র সমালোচনার মুখে কখনোই এর কোনো ব্যাখ্যাও দেননি ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি’র (এনএলডি) প্রধান অং সান সু চি। এ অবস্থায় এমন কথাও উঠেছে যে, শান্তির দূত খ্যাত সু চি আসলে ভেতরে ভেতরে একজন মুসলিম বিদ্বেষী!
সম্প্রতি সাংবাদিক পিটার পপহ্যামের ‘দি লেডি অ্যান্ড দি জেনারেলস: অং সান সু চি অ্যান্ড বার্মা’স স্ট্রাগল টু দি ফ্রিডম’ নামক জীবনী গ্রন্থে উঠে এসেছে এসব নানা বিষয়
বইটিতে বলা হয়, বিবিসির রেডিও-৪ এর ‘টুডে প্রোগ্রামে’র প্রথম মুসলিম উপস্থাপক মিশাল হুসাইনকে সাক্ষাৎকার দিতে যান সু চি। এর এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। সূ চি বলেন, ‘একজন মুসলিম আমার সাক্ষাৎকার নেবে, এটা তো কেউ আমাকে বলেননি।’
২০১৩ সালে যখন রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সু চির নিরবতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে, সে সময় ওই সাক্ষাৎকার দেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারে তাকে হুসাইন বারবার মুসলিম বিরোধী মনোভাব ও মুসলিম নিধনের নিন্দা জানানো প্রসঙ্গের অবতারণা করেন। কিন্তু সু চি বার বারই তা করতে অস্বীকার করেন।
মুসলিম নিধনকে হালকা করে দেখানোর জন্য সু চি বলেন, ‘আমি মনে করি অনেক অনেক বৌদ্ধও বিভিন্ন কারণে দেশ ছাড়ছেন। এটা হচ্ছে একনায়ক শাসনের কারণে আমাদের ভোগান্তি থেকে।’ সাক্ষাৎকারে তার এসব মন্তব্য ‘অফ দ্যা রেকড’ বা অপ্রকাশিত গোপন করে রাখা হয়।
সু চি ও তার দলের মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে এনএলডি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে বলে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে, তার দলের কোনো প্রার্থী মুসলিম ছিলেন না। মন্ত্রিসভায়ও কোনো মুসলিম সদস্য থাকার প্রশ্নই আসে না।
সরকারি নিপীড়নের শিকার এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি গৃহহীন রোহিঙ্গা মুসলিম এখনো মিয়ানমারের ভেতরে বিভিন্ন ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের জন্য কোনো প্রতিশ্রুতি নেই সু চি’র।
পিটার পপহ্যাম তার বই সম্পর্কে বলেন, ‘বইয়ে সু চি’র এসব বিষয় নিয়ে আসা খুবই যৌক্তিক। রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যুতে তার অবস্থান দ্বিমুখী। তবে সু চি নিজে বিশ্বাস করেন না যে তিনি মুসলিমদের বিদ্বেষী। কারণ তার প্রথম প্রেমিক ছিলেন একজন পাকিস্তানি মুসলিম। আর ১৯৮৮ সালে তাকে রাজনীতিতে আসতে প্রভাবিত করেছিলেন একজন বার্মিজ মুসলিম বুদ্ধিজীবী।’
সূত্র: দি টেলিগ্রাফ।