২৬ মার্চ ২০১৬: আজ ২৬ মার্চ, ৪৬তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। জাতি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে যে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল, দীর্ঘ নয় মাসে মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার দামাল সন্তানরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সে যুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনেন।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নির্বিচারে বাংলার বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মূহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
তাদের শ্রদ্ধা জানানো শেষ হলেই সর্বস্তরের মানুষের জন্য সৌধের ফটক খুলে দেয়া হবে। এ উপলক্ষে গণপূর্ত বিভাগের কর্মীরা ১০ দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নতুন রূপ দিয়েছেন স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণকে। স্মৃতিসৌধের চত্বর ঢেকে ফেলা হয়েছে নানা রঙের ফুল দিয়ে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশের এলাকা জুড়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানোসহ নিরাপত্তার স্বার্থে সৌধ প্রাঙ্গণের বিভিন্ন পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।’
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে স্মৃতিসৌধ এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে একাধিক পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। চত্বরের সিঁড়িসহ নানা স্থাপনায় পড়েছে রং-তুলির আঁচড়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বীর সন্তানদের প্রতি ‘গার্ড অব অনার’র মহড়াও শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্বাগত জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে সাধারণ দর্শনার্থীদের ২৩ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহর পর্যন্ত জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।’
সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
২৭ মার্চ বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন যুব ও ছাত্রসংগঠন মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।