২৫ মার্চ ২০১৬: নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনো খুনিদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বিশেষজ্ঞ মতামত ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে তদন্ত কাজও। এ ঘটনায় এখন ক্ষোভে ফুঁসছে কুমিল্লা। বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ হচ্ছে রাজধানীসহ সারা দেশে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও জানাচ্ছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
শুক্রবার কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, তনু হত্যার যাবতীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অভিজ্ঞদের নিয়ে একটা দল গঠন করা হয়েছে এবং তারা কাজ করে যাচ্ছে। তবে এখনো এ ঘটনায় কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি বলেন, মরদেহের সুরতহাল ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আমাদের মনে হয়েছে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তাই আমরা কোতয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা নিয়েছি। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন এ মামলার বাদী।
পুলিশ সুপার শাহ আবিদ বলেন, আমরা মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। হত্যার আলামত ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে পুলিশ নিজস্ব গতিতে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতামত চাওয়া হয়েছে। আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য অপেক্ষা করছি।
গত রোববার সন্ধ্যায় ধর্ষণের পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসসংলগ্ন এলাকার পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংকসংলগ্ন কালভার্টের পাশের একটি জঙ্গলের ভেতর মাথা থেতলানো সোহাগীর অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রব বলেন, ‘আমরা এখনো ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাইনি। তনুর শরীরে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাই আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি তাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। গত ২১ মার্চ তনুর বাবা অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই আমরা সিএমএইচ থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করি।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, ‘তনুর নির্মম মৃত্যুতে আমি খুবই মর্মাহত। আমরা সেনানিবাসের ভেতরে হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করেছি। থানায় মামলা হয়েছে। খুনিদের খুঁজে বের করতে পুলিশ তৎপর। আশা করছি শিগগিরই খুনিরা শনাক্ত হবে।’
তনুর বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তনু দুটি টিউশনি করতো। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাসা থেকে বের হতো। ওর মা আনোয়ারা বেগম এগিয়ে দিত। রাতে ফেরার পথেও ওর মা এগিয়ে নিয়ে আসতো। যেখানে টিউশনি করতো তার দূরত্ব বাসা থেকে ২০০ গজ। হত্যাকাণ্ডের স্থল বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে। আমি এখানে ৩১ বছর চাকরি করি। আট বছর ধরে কোয়ার্টারে থাকি। সেনানিবাসের সুরক্ষিত এলাকায় কারা ওকে মেরেছে জানি না। আল্লাহ দেখেছেন। আমি তনুর হত্যাকারীদের কঠিন বিচার চাই।’