২১ মার্চ ২০১৬:: রাত পোহালেই একযোগে দেশের ৩৪টি জেলার ৭৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণ শুরু হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনে যে কোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার সদস্য মাঠে থাকবে।
এদের মধ্যে রয়েছে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড, কমিউনিটি পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ। একই সঙ্গে ৩৪টি জেলার ১০১টি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে থাকবেন।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোট ৪০ হাজার পুলিশ সদস্য, ৯ হাজার র্যাব, ৯ হাজার বিজিবি, ৪ হাজার আনসার মোতায়েন থাকবে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা কাজ করবেন।
নির্বাচনে সহিংসতা প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ২০৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। সহিংসতার এ সকল ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪৩টি মামলা ও ৫৫টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিয়েছে পুলিশ। নির্বাচন পূর্ববর্তী এসব সহিংসতার ঘটনায় ৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
‘নির্বাচনে গোলোযোগ, মাস্তানি করে লাভ হবে না। প্রিজাইডিং অফিসার চাইলে সেখানকার নির্বাচন স্থগিত করে দিতে পারেন। নির্বাচনে নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী মোতায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পুলিশের একটি মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। টহল দেবে র্যাব-বিজিবির মোবাইল টিম। যে কোন ধরনের অপরাধ দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে ভোটার ও প্রার্থীদের অভয় দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। নির্বাচনে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংঘাত-সংঘর্ষ হলেই ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না।’
ইসির শেষ মুহূর্তের নির্দেশনায় নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষে দ্রুত ফলাফল প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনে ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে সবধরনের প্রচার-প্রচারণা।
নির্বাচনী আইনানুযায়ী কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোট গ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটগ্রহণের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় কোন ব্যক্তি জনসভা আহবান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না। এই বিধি লঙ্ঘন করলে অন্তত ৬ মাস বা অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
শনিবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। এছাড়া রোববার রাত থেকে ৩২ ঘন্টা সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে ইসি। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও অনুমোদিত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে তা শিথিল থাকবে।
এবারের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৩৪ জনসহ মোট ৩৬ হাজার ৪৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে প্রায় ৭ হাজার ৮৭টি কেন্দ্রে ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৫ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ব্যালট পেপারসহ সকল ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী সোমবারই প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউপিতে প্রথম ধাপে ইতোমধ্যে ৫৪ জন চেয়ারম্যান, ১৭৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৫৪ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২২ মার্চের ভোটে ৩ হাজার ৩৪ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ জন ও সংরক্ষিত পদে সাত হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরপর আরো ৫ ধাপে দেশের বাকি সাড়ে ৩ হাজার ইউপিতে ভোট হবার কথা রয়েছে।
এ ধাপে ৭ হাজার ৮৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে। এসব ভোটকেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩৬টি। এ হিসাবে প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৭ হাজার ৮৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে ১ জন করে ৩৮ হাজার ৩৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে ২ জন করে ৭৬ হাজার ৭২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মোট ভোটগ্রহণ করবেন ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৫ জন কর্মকর্তা। এতে পুরুষ ভোটার ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ভোটার ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ জন।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ২২ মার্চ ৭৩৪টি, ২৩ মার্চ নাগরপুরে ১১টি এবং ২৭ মার্চ টেকনাফের দু’টি ইউপি, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল, চতুর্থ ধাপে ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ও ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।