২১ মার্চ ২০১৬: দেশে প্রথমবারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের নিয়ম-কানুন ঘোষণা করলো সরকার। রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৬’ জারি করা হয়।
৬ পৃষ্ঠার নির্দেশিকায় ফেসবুক ছাড়া আরও ১০টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। একই সাথে বছর শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবহারকারীকে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার বা স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকারিভাবে প্রকাশ করা এসব গাইডলাইন শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য করা হয়েছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পরিপন্থী কোনো কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কনটেন্ট প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে এতে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয় প্রতিপন্নমূলক কনটেন্ট প্রকাশ করা যাবে না। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং লিঙ্গ বৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কিত কোনো কনটেন্ট প্রকাশ করা যাবে না বলে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, দাপ্তরিক যোগাযোগ ও মতবিনিময়, সমস্যা পর্যালোচনা ও সমাধান, জনসচেতনতা ও প্রচারণা, নাগরিকসেবা সহজ করা ও উদ্ভাবন, সিদ্ধান্তগ্রহণ ও নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ, জনবান্ধব প্রশাসন ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সরকারি অফিসগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট পরিচালনার নির্দেশনায় বলা হয়, অ্যাকাউন্টে কোন ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা তিন থেকে পাঁচজনের একটি মডারেটর দল থাকবে। সরকারের কর্মচারীদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টকে এই নির্দেশনার বাইরে রাখা হলেও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় দায়িত্বশীল আচরণ ও অনুশাসন মেনে চলতে নির্দেশনা এসেছে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে তিন মাসে একবার নিজ দপ্তরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অগ্রগতি ও কার্যকারিতা পর্যালোচনা করতে হবে। বছর শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবহারকারীকে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার বা স্বীকৃতির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। সেরা পোস্ট, সেরা কমেন্ট, সেরা পেইজ, সেরা নাগরিক সমস্য উপস্থাপক, সেরা সমাধান এবং সেরা প্রচারকে বিবেচনায় নিয়ে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত আছেন। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৮০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। আর আট শতাধিক সরকারি অফিসে দাপ্তরিক কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারীদের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্টে কোনো ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা ৩ থেকে ৫ জনের একটি মডারেটর দল থাকবে। সরকারের কর্মচারীদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টকে এই নির্দেশনার বাইরে রাখা হলেও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় দায়িত্বশীল আচরণ ও অনুশাসন মেনে চলতে নির্দেশনা এসেছে।
এ ছাড়া কনটেন্ট ও বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন এবং অপ্রয়োজনীয় ট্যাগিং না করতেও সরকারি কর্মচারীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মডারেটরকে তাদের পেজ সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার হালনাগাদ করতে হবে। জাতীয় ঐক্য ও চেতনা পরিপন্থী কোনো কনটেন্ট প্রকাশ করা যাবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানকে তিন মাসে একবার নিজ দফতরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অগ্রগতি ও কার্যকারিতা পর্যালোচনা করতে হবে, বছর শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবহারকারীকে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার বা স্বীকৃতির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। সেরা পোস্ট, সেরা কমেন্ট, সেরা পেজ, সেরা নাগরিক সমস্যা উপস্থাপক, সেরা সমাধান এবং সেরা প্রচারকে বিবেচনায় নিয়ে পুরস্কার দেয়া যেতে পারে বলেও নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ফেসবুক ছাড়াও আরো ১০টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, স্কাইপ, গুগ্ল্ প্লাস, ইমো, ভাইবার, লিংক্ড্ইন, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট ও হোয়াট্স্অ্যাপ)কে এ নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে গত ৪ নভেম্বর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিজের ফেইসবুক পাতায় ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ কোন বিষয় প্রকাশে নিষেধজ্ঞা রয়েছে।
সরকারের ৬ পৃষ্ঠার এই সম্পূর্ণ নির্দেশনা দেখা যাবে এই ঠিকানায়।