২০ মার্চ ২০১৬: আদালত অবমাননার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এবং খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেননি সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের নির্দেশে দুই মন্ত্রী হাজির হয়ে তাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা তুলে ধরলেও দু’জনকেই নতুন ব্যাখ্যাসহ আগামী রোববার আবারো সশরীর উপস্থিত হতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সপ্তাহ শুরুর দিনে সকাল সোয়া ৯টায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রুলের শুনানির শুরুতে আদালত বলেন, দুই মন্ত্রীকে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চাইতে বলা হলেও তারা তা করেননি।
আদালত আরও বলেন, তাদের মন্তব্য শুধু প্রধান বিচারপতিকেই ছোট করেনি, পুরো বিচার ব্যবস্থাকেই ছোট করেছে। দুই মন্ত্রী সংবিধান রক্ষার শপথ নিলেও তারা তা ভঙ্গ করেছেন। প্রধান বিচারপতি যদি এ মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতেন তাহলে দেশে রায়ট (দাঙ্গা) লেগে যেতো এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বানচাল হয়ে যেতো।
মন্ত্রীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, আপনারা যতোই ক্ষমতাবান হোন আইনের শাসন সচল রাখবে আদালত।
গত ৫ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘অনেকেই প্রসিকিউশন টিম ও বিচারক নিয়ে আমাদের কথা বলেছেন। আমি বলেছি এখানে যারা আছেন কারোরই অভিজ্ঞতা নেই। ফৌজদারী নিয়ম থেকে বের হতে তাদের কিছু সময় লাগবে কারণ এটি বিশেষ বিচার ব্যবস্থা। এই প্রসিকিউশন ও ইনভেস্টিগেশন টিম ২২টি মামলা নিস্পত্তি করেছে। আজ মীর কাশেম আলীর মামলা নিয়ে যে কথাগুলো আসছে সেরকম কথা কিন্তু অতীতে আসেনি। তাদের সফলতাই আগে দেখতে হবে।’
‘মীর কাশেম আলীর মামলার ক্ষেত্রে পুরো রায়টা আমি পড়েছি। দেশের ১৬ কোটি মানুষ এই মামলার বাদী। রায়ের এক জায়গায় লেখা, অন টোটাল অ্যাডভাইজাল উই ডু নট ফাইন্ড এনিথিং ফ্লট ইন দ্য ইনভেস্টিগেশন টাস্ক। আদালতের (ট্রাইব্যুনালের) এই একটা কথাই যথেষ্ট। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্য আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, প্রসিকিউশন ও ইনভেস্টিগেটিং টিমকে আদালতে দাঁড় করাতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন প্রসিকিউশন এই মামলা নিয়ে রাজনীতি করছেন।’
কামরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘তার প্রকাশ্য আদালতে এমন বক্তব্যে আমি সংক্ষুব্ধ। তার মন্তব্যের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রায় অন্যরকম হবে সেটা বোঝাই যায়। তিনি হয় আসামীকে খালাস দিবেন, রিমান্ডে পাঠাবেন। যদি তা না হয় তাহলে অন্যরা বলবে সরকারের চাপে রায় বদলানো হয়েছে।’
একই আলোচনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই সংকট প্রধান বিচারপতি সৃষ্টি করেছেন সেটাই সবচেয়ে বড় দুঃখ। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমরা সরকারের অংশ নই। সত্যিই তিনি সরকারের অংশ নন। সরকার একটি দলীয় বিষয়। আইন সবার জন্যই সবার। নুরেমবার্গে আঠারো দিনে লাখ লাখ মানুষের বিচার করা হলো সেটা নাকি ন্যয়বিচার আর আমরা পাঁচবছর ধরে শুনতেই আছি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধাপরাধীর ৫ বছর বা ১২ বছরের জেল হয়েছে। অভিযোগ যেহেতু প্রমাণিত হয়েছে যে সে যুদ্ধাপরাধী, সুতরাং তার নূন্যতম শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’
‘প্রধান বিচারপতি যদি ওপেন কোর্টে কোনো মন্তব্য করে থাকেন তাহলে সেটা উনারই একজন বিচারপতি হিসেবে, একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে বোঝা উচিত। এবং এমনটা করে থাকলে আমি আহবান করবো উনি সেটা প্রত্যাহার করে নিবেন অথবা উনি এটা মনে করলে একজন প্রধান বিচারপতির পদে আসীন থাকার সুযোগ কতটা আছে সেই বিচার তিনিই করবেন।’
তাদের এমন বক্তব্যে সর্বোচ্চ আদালত রুল জারি করলে তারা লিখিত বক্তব্য জমা দিলেও আপিল বিভাগ তাদের সশরীর হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। একদফা হাজিরার পর আগামী রোববার আবার তাদেরকে আদালতে আসতে হবে।