১৩ মার্চ, ২০১৬: বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহে পুলিশশের কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। রবিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত বলেছে, এ কার্যক্রমের ফলে যদি কেউ হয়রানির শিকার হয় তাহলে আইনি প্রতিকার চেয়ে আদালতে দারস্থ হতে পারবে।
এর আগে ৮ মার্চ একই বেঞ্চে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংক্রান্ত এই রিটের শুনানি হয়। ওইদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহের হোসেন সাজু।
গত ৩ মার্চ ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশের উদ্যোগের আইনগত ভিত্তি কি তা জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের আইজি ও ডিএমপি কমিশনারকে লিগ্যাল মোটিশ পাঠিয়েছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। নোটিশ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেয়ার কথা বলা হলেও সরকারে পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো জবাব দেয়া হয়নি। পরে ৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টে এই কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
রিটে বলা হয়, আইন মেনে চলা একজন নাগরিক হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনগত সহায়তা করতে আমি ইচ্ছুক। তবে যে সহায়তা তারা চাইছেন তা তাদের আইনগত এখতিয়ারে পড়ে না। এভাবে ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়ার মতো কোনো আইনি সুযোগও পুলিশের নেই। একমাত্র উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অনুমতি পেলেই তথ্য দেওয়া যায়। নাগরিকদের যেসব ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য পুলিশ যেভাবে সংগ্রহ করছে, তা করার মতো প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পুলিশের নেই।
এসব তথ্যের অপব্যবহার হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে রিটে বলা হয়, একজন নাগরিকের সুনিদ্দিষ্ট এসব তথ্য যদি কোনো ভুল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে পড়ে, তাহলে ব্যক্তির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সংবিধানে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, পুলিশের এ উদ্যোগে তাও ভঙ্গ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
আদেশের পরে ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন বাড়িতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা ও বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর গত বছর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের এই কাজ শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এক পৃষ্ঠার যে ফরম ভাড়াটিয়াদের পূরণ করতে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ভাড়াটিয়ার ছবির পাশাপাশি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখসহ বাসার বাসিন্দা এবং গৃহকর্মী ও ড্রাইভারের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের লোগো সম্বলিত ঐ ফরমের ফটোকপি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আবার তা সংগ্রহ করছেন পুলিশ সদস্যরা।