০৯ মার্চ, ২০১৬: কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরের বাকঁখালীর মোহনায় বেসরকারি পরিবহন সংস্থার বিধ্বস্ত বিমানের চার ক্রুর মধ্যে পাইলটসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। অপরজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্তমানে চিকিৎসাধীন। আহত-নিহতরা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক। বঙ্গোপসাগরে একটি মহড়া দেখতে উপস্থিত থাকা নৌ বাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ঘটনার পরপরই দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং উদ্ধার কাজ তদারকি করেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার সাধন কুমার মোহন্ত জানান, সকাল সোয়া ৯টার দিকে রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর চার আরোহী নিয়ে উড়োজাহাজটি সাগরের বাকঁখালীর মোহনা নাজিরারটেক পয়েন্টে বিধ্বস্ত হয়। কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসলাম হোসেন জানান, ট্রু এভিয়েশনের আন্তনভ-২৬ মডেলের ওই উড়োজাহাজটি কক্সবাজার ও যশোরের মধ্যে চিংড়ি পোনা পরিবহনের কাজে ব্যবহূত হয়।
দূর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে বিমানের চার আরোহীর সবাই রাশিয়ার নাগরিক বলে দাবি করা হলেও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, তারা ইউক্রেনের নাগরিক। তিনি জানান, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর একজনের মৃতদেহ ও আরেক জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ ছিলেন আরো ২ জন। বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে নিখোঁজ ২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
দূর্ঘটনা কবলিত বিমানটির পরিচালন সংস্থা ট্রু এভিয়েশনের ষ্টেশন ম্যানেজার এস এম হাসনাত জাহান জানান, বিমান আরোহীরা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক। প্রথমে উদ্ধার হওয়া নিহত কুলিশ আন্দ্রে (৪৭) বিমানটির ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং চিকিৎসাধীন নেভিগেটর ডলোডায়মারকে (৪৪) কো-ক্রু। পরে উদ্ধার হওয়া নিহতরা হলেন- বিমানটির ক্রু ক্যাপ্টেন মুরাদ কাপারত ও কো-ক্রু ফাষ্ট অফিসার ইভান ডেমান। সৈকত থেকে আধা-কিলোমিটার দূরে সাগরে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই বিমান বাহিনীর একটি টহল বিমান, কোস্টাগার্ডের নৌযান ও স্থানীয় জেলেরা উদ্ধার কাজ শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও তল্লাশীতে অভিযানে অংশ নেন।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের অপারেশন আব্দুল মজিদ জানান, সকাল ১০ টার দিকে প্রথমে দুইজনকে স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে নিখোঁজ দুইজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া জানান, ‘প্রথমে হাসপাতালে আনা দুইজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। অপরজন মুমূর্ষুবস্থায় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। পরে আরো দুইজনের মৃতদেহ আনা হয়েছে। এ নিয়ে এই ঘটনায় তিন জন নিহত হলেন।’
ঘটনার সময় বঙ্গোপসাগরে নৌ বাহিনীর একটি মহড়া দেখতে উপস্থিত ছিলেন নৌ বাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তাত্ক্ষনিক খবর পেয়ে তিনি যুদ্ধজাহাজসহ ঘটনাস্থলে চলে যান। নৌ বাহিনীর ডুবুরী ও কোষ্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রুত উদ্ধার অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। তিনি নিজেই উদ্ধার অভিযান তদারকি করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নৌ বাহিনীর পরিচালক (গোয়েন্দা) ক্যাপ্টেন এম সোহায়েল উপস্থিত ছিলেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উড্ডয়নের পরপরই বিমানটি যশোর যাত্রা বাতিল করে কক্সবাজারে জরুরি অবতরণের জন্য বার্তা পাঠায়। কিন্তু এর পরপরই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উদ্ধার অভিযানে নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ অপরাজেয় ও অতন্দ্র এবং একটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্র্যাফট, ৫টি বোট ও ৪টি ডুবুরী দল অংশ নেয়। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।