২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত পোল্যান্ডের নাগরিক পিটার সিজোফেনসহ মোট তিনজন বিদেশি জড়িত বলে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে। তবে এদের মধ্যে দুজনই বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আর এটিএম কার্ড জালিয়াতির নেপথ্যে রয়েছে প্রবাসী বাঙালিদের একটি বড় অংশ।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে সকালে ডিবি’র পক্ষ থেকে পিটারসহ সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মোকসেদ আল মাকসুদ, রেজাউল করিম ও রেফাত আহমেদ ওরফে রনিকে গ্রেফতার করার খবর জানানো হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জনশক্তির ব্যবসার ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন পিটার। কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, এর আগেও সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এভাবে জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘পিটার পুলিশকে জানিয়েছে, সিটি ব্যাংকের গ্রেফতারকৃত ওই তিন কর্মকর্তার সহায়তায় এরআগে বিদেশি কয়েকজনের একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। ফলে সেসব দেশে ম্যাসেজ গেছে। যে কারণে বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে টাকার কোনো ঘাটতি হয়নি। পরে পিটার ব্যাংক কর্মকর্তাদের পরামর্শে এটিএম কার্ড জাল করে বাংলাদেশি গ্রাহকদের একাউন্ট থেকেও টাকা তোলা শুরু করেন। আটক তিন ব্যাংক কর্মকর্তাই এটিএম কার্ড (ডেবিট কার্ড) ডিভিশনের কর্মী।’
অতিরিক্ত কমিশনার আরো জানান, পিটারকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে প্রথমে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে সিটি ব্যাংকের মাকসুদকে। পরে অপর দুই কর্মকর্তা রেজাউল করিম, ওরফে শাহীন এবং রেফাত আহমেদ, ওরফে রনিকে আটক করে ডিবি। একই চক্রের দুজন বিদেশি দেশের বাইরে পলাতক রয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে প্রায় ২১ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি।
এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই ঘটনায় এক বিদেশিকে আটক করে পুলিশ। তিনি পূর্ব ইউরোপের একটি দেশের নাগরিক বলে পুলিশ জানায়। ৬ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে ইবিএল, ইউসিবি আর সিটি ব্যাংকের গ্রাহকদের অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটে।
এটিএম বুথে স্ক্যামিং ডিভাইস বসিয়ে ওই তিনটি ব্যাংকের ৩৬ জন গ্রাহকের ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এ ঘটনায় বনানী থানায় ইউসিবি এবং পল্লবী থানায় সিটি ব্যাংক আলাদা দু’টি মামলা করে। পরে ঘটনার তদন্ত শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এটিএম বুথে জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এক বিদেশি নাগরিক ও সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে ছয় দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। পোলিশ নাগরিক পিওতর স্চেপান মাজুরেক এবং সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের তিন কর্মকর্তা মকসেদ আলম ওরফে মাকসুদ, রেজাউল করিম ওরফে শাহিন ও রেফাজ আহমেদ ওরফে রনিকে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) বিদেশি নাগরিকসহ চারজনকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদের আটক করা হয়।