১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: দীর্ঘদিন পর মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর পথ খুলেছে। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও মালয়েশিয়ার পক্ষে জনশক্তি বিষয়কমন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েন এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
চুক্তি অনুযায়ী, আগামী তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে মালয়েশিয়ায়।
এর আগে শুধু বনায়ন খাতে শ্রমিক নিত মালয়েশিয়া। এই চুক্তির ফলে এখন সেবা, নির্মাণ, কৃষি ও উৎপাদন খাতে শ্রমিক নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এখন থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যেতে খরচও কম হবে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি জানান, মালয়েশিয়ায় যেতে প্রত্যেক শ্রমিকের ৩৪-৩৭ হাজার টাকা খরচ হবে। নিয়োগকর্তারা অধিকাংশ অভিবাসন ব্যয় বহন করবেন।
তিনি আরো বলেন, এই চুক্তি অনুযায়ী সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো শ্রমিক পাঠাতে পারবে।
মালয়েশিয়ায়র জনশক্তি বিষয়কমন্ত্রী রিচার্ড রিয়াদ আনাক জায়েন চুক্তি স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের জানান, শ্রমিকের বেতন শহর ভেদে ৮০০-৯০০ রিঙ্গিত (মালয়েশিয়ার মুদ্রা) হবে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক বিরোধী প্রচারণা
ওদিকে বাংলাদেশী শ্রমিক নেয়ার খবরে মালয়েশিয়ায় এক রকম আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া বাংলাদেশী বিরোধী সেন্টিমেন্ট ছড়িয়ে দিয়েছে। তারা বর্ণবাদ, অপরাধের আতঙ্ক এবং অর্থনৈতিক উদ্বেগ ছড়িয়ে দিচ্ছে। বুধবারও পুর্তুবুহান রাপাত মালয়েশিয়া নামে একটি গ্রুপ বাংলাদেশী শ্রমিক নেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তারা অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছে। বলেছে, এসব শ্রমিক ধর্ষণে জড়িত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অভিবাসী শ্রমিক, বিশেষ করে বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে তারা। তবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেছেন, আমরা যা করছি তা আমাদের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের জন্য। বৃক্ষায়ন শিল্পের মতো বিভিন্ন খাতে সস্তায় শ্রমিক প্রয়োজন অনেক ক্ষেত্রে। এ খবর দিয়ে মালয়েশিয়ার পত্রিকা নিউ স্ট্রেইটস টাইমস লিখেছে, এ মাসের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সরকার ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তার অধীনে ১৫ লাখ শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে নেয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার মিডিয়ায় এক ধরনের নেতিবাচক ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। মালয় মেইল অনলাইন লিখেছে, এসব শ্রমিকের কাছে আদর্শ হয়ে গেছে স্থানীয় নারীদের ধর্ষণ করা। মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন জনের স্ত্রী, কন্যাদের ধর্ষণ করে তারা। তারা এমন আচরণ করে যেন তাদের ধর্ষণের লাইসেন্স আছে। এক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়া হবে? এমন প্রশ্ন রেখে তারা আরও লিখেছে, এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে। পুর্তুবুহান রাপাত মালয়েশিয়া গ্রুপের সভাপতি বলেছেন, বিদেশী শ্রমিকরা শুধুই তাদের দেশে রোগ বহন করে নিয়ে যান। তারা সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার ঝুঁকিও আছে। বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এমন প্রচারণা শুধু পুর্তুবুহান রাপাত মালয়েশিয়া একাই চালাচ্ছে তা নয়। অভিবাসী বিরোধী প্রবণতা মালয়েশিয়ার সমাজে গভীরে প্রোথিত। একটি অনলাইন লিখেছে, বাংলাদেশী শ্রমিকরা দীর্ঘদিন মিথ্যা অভিযোগের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় বেকারত্ব থেকে শুরু করে যেকোন অপরাধের জন্য তাদের দায়ী করা হয়। এতে উস্কানি দিচ্ছে কিছু মিডিয়া। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে একজন টিনেজ মেয়েকে বাংলাদেশী এক শ্রমিক ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনা তুলে ধরে তারা বলেছে, নতুন করে ১৫ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক যখন মালয়েশিয়ায় যাবেন তখন এ ধরনের আরও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটার যৌক্তিক কারণ আছে।
London Bangla A Force for the community…
