১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬:অবসরে যাওয়ার পরে বিচারপতিদের সুপ্রিম কোর্টে বা হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করা বন্ধে রিট করেছেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ।
সোমবার হাইকার্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিনি এই রিট আবেদন করেন। আগামী রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃঞ্চাদেব নাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই রিটের শুনানি হতে পারে বলে আইনজীবী আকন্দ জানিয়েছেন।
ইউনুছ আলী বলেন, রিটে বলা হয়েছে, অবসরে যাওয়ার পরে কোনো বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে বা হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করতে পারবেন না মর্মে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের ৩৩ ধারাও বাতিলে রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী অবসরে যাওয়ার পরে কোন বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে বা হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করার কোনো নিয়ম ছিল না।
ইউনুছ আলী বলেন, জিয়াউর রহমানের সময় সামরিক ফরমানের মাধ্যমে এই নীতি আবার প্রচলন করেন। পরে বর্তমান সরকার পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আবার তা ফিরিয়ে আনেন। যদিও সরকারের দাবি তারা ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা জনগণের সঙ্গে ভাওতা বাজি করছেন।
সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আইনজীবী হিসেবে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আদালতে দাঁড়ানো নিয়ে দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় বইছে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর এ অবস্থানকে নীতি নৈতিকতা বিরোধী বলে অখ্যায়িত করেছেন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সদ্য অবসরে যাওয়া এই বিচারপতি।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে মামলার মীর কাসেমের আপিল শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাই লর্ড সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা সরকারি বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করে প্র্যাকটিস করছেন যা শোভনীয় নয়।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, দীর্ঘদিন চাকরি করার পর বিচারপতিরা এক বছর পর্যন্ত বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এটা তাদের প্রিভিলাইজ (সুযোগ)। এ সময় প্রধান বিচারপতি বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়া অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান বিচারপতিদের আদালতের প্রথা ও নিয়মকানুন মেনে চলা উচিৎ। তখন নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ’মাই লর্ড অতীতে ও আমি এর অপব্যবহার করিনি, এখনো করছি না। আর কয়েকমাস আছি (সুবিধা নিতে পারবো), আমি ভবিষ্যতেও এর অপব্যবহার করবো না। আমি আইন মেনে আইন পেশায় কাজ করছি। সংবিধান আমাকে ক্ষমতা দিয়েছে।’
গত ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অবসর গ্রহণ করেন। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা নিয়ে বর্তমানে তিনি বিচারপতিদের বাসভবনে থাকেন।