১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬: সেই ছোট্ট মেঘের বয়স এখন ৯। চোখজুড়ে স্বপ্ন। মাত্র কদিন হলো। নতুন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। স্বপ্ন আর ইচ্ছার ফাঁকে বারবার উঁকি দেয় বাবা সাগর সারওয়ার ও মা মেহেরুন রুনির ছবি। ছোট্ট বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে হাঁটার ছবি আঁকে মেঘ। ১১ই ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিনটিকে সামনে রেখে মেঘের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। এ সময় এলেই বাবা-মায়ের স্বজন-সহকর্মীর সহমর্মিতায় সিক্ত হয় মেঘ। বাড়ে কষ্ট। সারাক্ষণ চোখে ভাসে বাবা-মায়ের ছবি। ছোট বয়সে প্রায়ই বাবার কাছে বায়না ধরতো মাহির সারওয়ার মেঘ। শান্ত মেঘ এখন আর বায়না ধরে না। সম্প্রতি তাকে ভর্তি করা হয়েছে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (বিআইটি) স্কুলে। নানি আর দুই মামার সঙ্গে থাকে পশ্চিম রাজাবাজারের ৬৬/১২নং বাড়িতে। বাসায় গিয়ে দেখা গেল ড্রয়িং রুমে ছড়িয়ে আছে মেঘের আঁকা অনেক ছবি। একটি ছবিতে মেঘ বাবা-মায়ের হাত ধরে আছে। আর তাতে লেখা হ্যাপি বার্থডে। মেঘ জানায়, আব্বু-আম্মু না থাকলেও প্রতি বছর তাদের জন্মদিনে কেক কাটে সে। আব্বু-আম্মুর কথা সব সময় মনে পড়ে। আব্বুর কাছে যা চাইতাম তাই এনে দিতেন। আর আম্মু আমাকে ভাত খাওয়াতেন পুলিশের ভয় দেখিয়ে। তখন পুলিশকে খুব ভয় পেতাম। কিন্তু এখন আর পুলিশকে ভয় পাই না। মেঘের কাছে নানুই এখন তার মা। তাই নানুকেই আম্মা বলে ডাকে সে। আর মামা রোমান সবচেয়ে আদর করেন তাকে।
ক্রিকেট খেলা মেঘের খুব পছন্দ। তাই বড় হয়ে ক্রিকেটার হতে চায় সে। মেহেরুন রুনির মা নুরুন্নাহার বেগম জানান, বাসায় কোনো দুষ্টুমী করে না মেঘ। পড়ার সময় পড়ে আর বাকি সময়টা হয় কম্পিটারে খেলে, না হয় টিভি দেখে। আবার কখনও কখনও নানির কাজে সাহায্য করে সে। নুরুন্নাহার বেগম বলেন, এই যে ড্রয়িং রুমটা দেখছেন এটা মেঘ গুছিয়ে রেখেছে। কেউ আসবে শুনলেই সে ঘর গুছিয়ে রাখে। মেঘের মামা নওশের আলম রোমান বলেন, অনেক মেধাবী মেঘ। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই মেঘের মা মেহেরুন রুনির একসময়ের সহকর্মী ফারজানা রুপার সহযোগিতায় মেঘকে বিআইটি স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে।
২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। চার বছর হয়ে গেলেও বোন ও ভগ্নিপতির হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রোমান বলেন, এতদিনেও আমরা বিচার পেলাম না। তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। কিন্তু আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন পর্যন্ত এই হত্যার বিচার চাইবো। মেহেরুন রুনির মা নুরুন্নাহার বেগম বলেন, রুনির খুনিদের বিচার আমি দেখে যেতে না পারলেও আল্লাহ ওদের বিচার করবেন। আমার শুধু একটাই চাওয়া যেন আমার মেঘ বেঁচে থাকে। মানুষের মতো মানুষ হয়।
সূত্র: মানবজমিন