শেষ পর্যন্ত দ্য গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ ২০১৫-এর প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন! হয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী সিলেটের মেয়ে নাদিয়া। এবারের ‘বৃটিশ বেইক অফ’ বিবিসির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে হিজাব মাথায় এক মুসলিম নারী দেখে মুসলমানদের আগ্রহের কমতি ছিলনা। তিনি হলেন লুটনের বাসিন্দা নাদিয়া হোসাইন। তিন সন্তানের জননী নাদিা এবারের বৃটিশ বেইক সিরিজের চুড়ান্ত পর্বে জয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরন। ১২ জন সৌখিন বেকার্সের অংশ গ্রহণে ৮ পর্বের দ্যা গেইট বৃটিশ বেইক অফের ফাইনাল পর্ব হয় বুধবার। এবারের সিরিজের প্রতিটি অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে দেখেছেন ন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরন। চাপের মধ্যে থেকেও নাদিয়া যেভাবে ঠান্ডা মাথায় কাজ করেন, নাদিয়ার সে বিষয়টি বেশ পছন্দ করেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরন। এ কারণে আগামী বুধবারের ফাইনালে নাদিয়া জয়ী হবেন বলে আশা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ধারনাকে সত্যি প্রমান করলেন নাদিয়া। নাদিয়ার বিজয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। ইতিমধ্যে ফেইস বুক, টুইটারে আর ওয়াটআপ গ্রুপে অভিনন্দন জানানো শুরু হয়েগেছে।
এদিকে ৩০ বছর বয়সী নাদিয়া হোসেইন এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তিনি যখন এ প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন তখন তার ভয় ছিলো যে, হিজাব পড়া মুসলিম মহিলা হিসাবে দর্শকরা হয়তো তাকে ভালোভাবে নেবে না। কিন্তু এখন দর্শকদের ভালোবাসায় অভিভুত তিনি।
ব্রিটিশ বেকিংয়ের এবারের শীর্ষ আসনটি তিনি পাবেন কি না, তা নিয়ে একটু সংশয় ছিল। তবে শুরু থেকেই তিনি ছিলেন প্রবল আত্মবিশ্বাসী। আর সেই আত্মবিশ্বাসের জোরে তিনি গড়লেন ইতিহাস।
যুক্তরাজ্যের রান্না-বিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা বিবিসির ‘দ্য গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’-এর চূড়ান্ত পর্ব ছিল গতকাল বুধবার। প্রতিযোগিতাটি রাতে যখন বিবিসি ওয়ান চ্যানেলে দেখানো হচ্ছিল, তখন প্রায় দেড় কোটি দর্শক ছিলেন উদ্গ্রীব হয়ে। প্রতীক্ষা তিন প্রতিযোগীর মধ্যে শিরোপা ওঠে কার মাথায় তাই দেখার। শেষ পর্যন্ত জিতলেন নাদিয়া। রানারআপ হন ইয়ান কামিং ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত তমাল রায়।
ব্রিটিশ কমেডিয়ান জো ব্র্যােন্ডর হাত থেকে সেরার পুরস্কার নেন নাদিয়া। কেক-পেস্ট্রি তৈরির এই প্রতিযোগিতার শেষ পর্যায়ে ‘ক্ল্যাসিক ব্রিটিশ কেক’ বানাতে গিয়ে নাদিয়া বেছে নিয়েছিলেন বিয়ের কেক। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিয়েতে কেকের প্রচলন খুব কম। আমার স্বামী আবদাল হোসেইন ও তিন সন্তানের পছন্দ অনুযায়ী কেক বানিয়েছি।’
রানারআপ হওয়া তমাল ও ইয়ানও বলেছেন নাদিয়ার পাওনা ছিল এই পুরস্কার।
ব্রিটিশ বেক অফ প্রতিযোগিতার এটি ছিল ষষ্ঠ সিজন। চূড়ান্ত পর্বের বিচারক ছিলেন ব্রিটিশ বেকের দুই জনপ্রিয় মুখ পল হলিউড ও ম্যারি ব্যারি। দুজনই বলেছেন, নাদিয়া শুরু থেকেই আশার আলো দেখিয়েছেন। প্রতিটি পর্বে তাঁর একাগ্রতার ছাপ ছিল। এককথায় অনন্য নাদিয়া।
শখের বশে কেক-পেস্ট্রি তৈরি করেন—এমন প্রতিযোগীদের নিয়েই এ আয়োজন। ধাপে ধাপে বাছাই শেষে ১২ জনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ১০ সপ্তাহের এই প্রতিযোগিতা। এরপর তিনজন প্রতিযোগী উত্তীর্ণ হন চূড়ান্ত পর্বে। সেই তিনজনকে নিয়েই গতকালের এই আসরে সেরা হলেন প্রথম কোনো বাংলাদেশি।
লন্ডনের অদূরে লুটন শহরে জন্ম নেওয়া নাদিয়ার পৈতৃক বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারের মোহাম্মদপুর গ্রামে।