মহিলা রোগীদের ডাক্তারি পরীক্ষার নামে বিবস্ত্র করতেন তিনি। এর পর স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দিয়ে যৌন লালসা চরিতার্থ করতেন। সেই দৃশ্য আবার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ধারণ করতেন। তারপর সেই ভিডিও দেখিয়ে বাধ্য করতেন তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে।
তিনি আর কেউ নন, চিকিৎসক নজরুল ইসলাম। বুধবার রাতে তার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার শাপলা ক্লিনিকে নাসরিন আক্তার (২৪) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। রাতেই চিকিৎসক নজরুল ইসলাম ও ক্লিনিকের মালিকের ভাই আজিজুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। সিলগালা করে দেওয়া হয় ক্লিনিকটি।
চিকিৎসক নজরুল ইসলামকে আটকের পর বেরিয়ে আসে তার নানা কুকর্মের কাহিনী। বৃহস্পতিবার দুপুরে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মো. ওয়ালিদ হোসেন তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য দেন।
তিনি জানান, নজরুল ইসলাম মহিলা রোগীদের আলট্রাসনোগ্রাফি ছাড়াও যে কোন ধরনের ডাক্তারি পরীক্ষার সময় তাদের যৌন নিপীড়ন করতেন। এসব যৌন নিপীড়নের কতকগুলো ভিডিও ক্লিপ জব্দ করা হয়েছে। ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, আলট্রাসনোগ্রাফির সময় নজরুল ইসলাম নারীদের সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করতেন। এর পর তিনি তাদের স্পর্শক্তর স্থানে মালিশ করেন।
এসপি জানান, শুধু তাই নয়। মহিলা রোগীদের পরিধেয় কাপড়ও খুলে তাদের উলঙ্গ করেন। আর এ সকল ঘটনা তিনি গোপনে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ধারণ করেন। পরবর্তীতে ওই সকল মহিলাদের ফোন করে তাদের ভিডিও ক্লিপের ভয় দেখিয়ে বাধ্য করতেন তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায, মহিলা রোগীদের এভাবে যৌন নিপীড়নের দায়ে পিরোজপুরের দুইটি ক্লিনিক থেকে নজরুলকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি ক্লিনিকে যৌন নিপিড়নের দায়ে এর আগেও একবার নজরুলকে আটক করেছিল পুলিশ।
এসব ঘটনার পর নজরুল শহরের শতাব্দী ডায়াগনস্টিকের সামনে একটি চেম্বার খুলেছেন। এ ছাড়া শহরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলার ক্লিনিকে তিনি রোগী দেখেন।
ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, প্রসূতি নাসরিন আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা ভান্ডারিয়া উপজেলার মধ্য ভান্ডারিয়া গ্রামের শাহজাহান হাওলাদার বাদী হয়ে ডা. নজরুল ইসলাম, ক্লিনিক মালিক স্বপন এবং অপারেশনে সহায়তাকারী তার ভাই আজিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনের নামে একটি মামলা করেছেন। নাসরিন বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সেলিম হাওলাদারের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার নজরুল ও আজিজুরকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর না করে জেল হাজতে পাঠায়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাপলা ক্লিনিকে নাসরিনকে ভর্তি করেন তার পরিবার। পরের দিন বুধবার সকাল ৮টায় তার সিজারিয়ামের অপারেশন করার কথা থাকলেও, অপারেশন করা হয় দুপুর আড়াইটায়। ওই ক্লিনিকে কোন অনুভূতিনাশক প্রয়োগকারী না থাকলেও, নিজেই ঝুঁকি নিয়ে ওই রোগীকে অনুভূতিনাশক প্রয়োগ করেন নজরুল। বিকেল ৫টার দিকে রোগীর নাক মুখ থেকে রক্ত পড়া শুরু হলে হাসপাতালের ম্যানেজারসহ অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। নজরুল হাসপাতালের মধ্যে আত্মগোপন করেন।
পরে নাসরিনের আত্মীয়রা মূমূর্ষ অবস্থায় তাকে দ্রুত ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে নাসরিন একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন। সে সুস্থ আছে।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা ওই ক্লিনিক ঘেরাও করে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্লিনিক থেকে ডাক্তার নজরুল ও আজিজুরকে আটক করে।
নজরুল ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর কালিবাড়ি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। ২০০৩ সালে তিনি বরিশাল মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। কয়েক বছর ধরে তিনি পিরোজপুরের বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগীদের চিকিৎসার নামে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন।